০৬:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

দেখুন জালিয়াতির জ্বলন্ত প্রমাণ, ভোটের দিন ফরিদপুর-১ আসনে কেন্দ্রের ভেতরে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার টাকা ভাগাভাগি! কীসের আলামত এসব?

  • ১২:১৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪০৭

"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে ভোট চলাকালীন সময়ে বোয়ালমারী উপজেলার একটি কেন্দ্রের ভেতরে বসে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা টাকা ভাগাভাগি করছেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে।

ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওচিত্রে ধরা পড়েছে ভোটে জালিয়াতির এমন জ্বলন্ত প্রমাণ। তবে কী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার যোগসাজশে একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট কারচুপি হয়েছে? উঠেছে নানা প্রশ্ন।

প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ভোটের স্বচ্ছতা, নিরপক্ষেতা। বিশেষ এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট কারচুপির উদ্দেশে ওই টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, এ কেমন নির্বাচন? কীসের আলামত এসব?

ভিডিওটি বোয়ালমারীর দাদপুরের কলমেশ্বরদী ইয়াকুর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন হরিহরনগর আলিম মাদরাসার বাংলা প্রভাষক অশোক কুমার দাস।

ভিডিওতে দেখা যায়, ভোটের দিন দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কলমেশ্বরদীর ওই কেন্দ্রে এই দুই কর্মকর্তা মগ্ন হয়ে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করছেন। নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি শেষে এক পর্যায়ে তারা ভাগে পাওয়া টাকাগুলো আলাদা আলাদাভাবে গুনছেন।

এসব কীসের টাকা গভাগ করেছেন সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। তবে তারা ইয়াকুব উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের দিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করেন।

প্রিজাইডিং অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বাইরে কিছু করিনি।’

আর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অশোক কুমার দাসও ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন। বলেন, ‘অবৈধ কিছুই করিনি।’

এই দুই কর্মকর্তাই বিশেষ এক প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভোটে কারচুপি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। যদিও ভিডিওতে তাদেরকে ভাগবাটোয়ারা করে মনোযোগ সহকারে নিজেদের ভাগের টাকা গুনে নিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুর-১ আসনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি তারই যেন জ্বলন্ত প্রমাণ। এ ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘এটি অবশ্যই নির্বাচনী অনিয়ম। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে এবং নজরে আনা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

ফরিদপুর-১ আসনের আওতায় তিন উপজেলার একটি হচ্ছে বোয়ালমারী। অন্য দুটি হচ্ছে আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী। ভোটের দিন কলমেশ্বরদীসহ বোয়ালমারী ও মধুখালীর অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে নির্বাচনী অনিয়ম আর নৌকার পক্ষে ভোট কারচুপির খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়।

ভোটগ্রহণ শেষে রাতে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে সেসময় তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা জানাতে পারেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

জালভোট প্রদান, মৃত মানুষ ও প্রবাসীদের নামে ভোট প্রদান, ব্যালট পেপারে ইচ্ছা মতো একজন বিশেষ প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা, অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ভোটে কারচুপির নানা অভিযোগ এনে বিতর্কিত কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিল করে অর্ধ শতাধিক কেন্দ্রে পুনরায় ভোট দাবি করে নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে আবেদন করেন পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন। নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

কেন্দ্রের ভেতরে বসে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার টাকা ভাগাভাগির ঘটনা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা জানতে চাইলে সাবেক ইসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মামলা করতে পারেন। সেটির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে।’

ফরিদপুর জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুর-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮৬ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৬ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৯ জন নারী। এছাড়া ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। ফরিদপুর-১ আসনে মোট কেন্দ্র ১৯৬টি।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

You cannot copy content of this page

দেখুন জালিয়াতির জ্বলন্ত প্রমাণ, ভোটের দিন ফরিদপুর-১ আসনে কেন্দ্রের ভেতরে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার টাকা ভাগাভাগি! কীসের আলামত এসব?

১২:১৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে ভোট চলাকালীন সময়ে বোয়ালমারী উপজেলার একটি কেন্দ্রের ভেতরে বসে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা টাকা ভাগাভাগি করছেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে।

ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওচিত্রে ধরা পড়েছে ভোটে জালিয়াতির এমন জ্বলন্ত প্রমাণ। তবে কী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার যোগসাজশে একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট কারচুপি হয়েছে? উঠেছে নানা প্রশ্ন।

প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ভোটের স্বচ্ছতা, নিরপক্ষেতা। বিশেষ এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট কারচুপির উদ্দেশে ওই টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, এ কেমন নির্বাচন? কীসের আলামত এসব?

ভিডিওটি বোয়ালমারীর দাদপুরের কলমেশ্বরদী ইয়াকুর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন হরিহরনগর আলিম মাদরাসার বাংলা প্রভাষক অশোক কুমার দাস।

ভিডিওতে দেখা যায়, ভোটের দিন দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কলমেশ্বরদীর ওই কেন্দ্রে এই দুই কর্মকর্তা মগ্ন হয়ে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করছেন। নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি শেষে এক পর্যায়ে তারা ভাগে পাওয়া টাকাগুলো আলাদা আলাদাভাবে গুনছেন।

এসব কীসের টাকা গভাগ করেছেন সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। তবে তারা ইয়াকুব উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের দিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করেন।

প্রিজাইডিং অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বাইরে কিছু করিনি।’

আর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অশোক কুমার দাসও ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন। বলেন, ‘অবৈধ কিছুই করিনি।’

এই দুই কর্মকর্তাই বিশেষ এক প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভোটে কারচুপি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। যদিও ভিডিওতে তাদেরকে ভাগবাটোয়ারা করে মনোযোগ সহকারে নিজেদের ভাগের টাকা গুনে নিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুর-১ আসনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি তারই যেন জ্বলন্ত প্রমাণ। এ ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘এটি অবশ্যই নির্বাচনী অনিয়ম। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে এবং নজরে আনা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

ফরিদপুর-১ আসনের আওতায় তিন উপজেলার একটি হচ্ছে বোয়ালমারী। অন্য দুটি হচ্ছে আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী। ভোটের দিন কলমেশ্বরদীসহ বোয়ালমারী ও মধুখালীর অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে নির্বাচনী অনিয়ম আর নৌকার পক্ষে ভোট কারচুপির খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়।

ভোটগ্রহণ শেষে রাতে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে সেসময় তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা জানাতে পারেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

জালভোট প্রদান, মৃত মানুষ ও প্রবাসীদের নামে ভোট প্রদান, ব্যালট পেপারে ইচ্ছা মতো একজন বিশেষ প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা, অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ভোটে কারচুপির নানা অভিযোগ এনে বিতর্কিত কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিল করে অর্ধ শতাধিক কেন্দ্রে পুনরায় ভোট দাবি করে নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে আবেদন করেন পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন। নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

কেন্দ্রের ভেতরে বসে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার টাকা ভাগাভাগির ঘটনা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা জানতে চাইলে সাবেক ইসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মামলা করতে পারেন। সেটির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে।’

ফরিদপুর জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুর-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮৬ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৬ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৯ জন নারী। এছাড়া ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। ফরিদপুর-১ আসনে মোট কেন্দ্র ১৯৬টি।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"