নারায়ণগঞ্জ ০৫:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বাঁশ শিল্প বদলাতে পারেনি তাদের ভাগ্য

 অনলাইন ভার্সন
  • ০১:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
  • / ৫৬৭

"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

আলোকিত শীতলক্ষ্যা : নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার বাঁশের তৈরী সামগ্রীগুলো যেন তাদের কদর হারাতে বসেছে। বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্ধ এলাকা হতে একসময় বিপুল পরিমাণ বাঁশের সামগ্রী এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা এসে নিয়ে যেতো। ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বাঁশ শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে।

জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ-ঝাড় উজার হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা। মূল্যবৃদ্ধি, বাঁশের দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে বিদায় জানাতে বসেছে। এভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ শিল্প। তাছাড়া সুবিধা করতে না পেরে এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছে অন্য পেশায়।

বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউপির লাঙ্গলবন্ধের পাড়া গ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের পণ্যসামগ্রী বানানো চলছে। পরিবারের বিভিন্ন বয়সী লোকজন এ কাজ করছেন। এখানে অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ পরিবার এই শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও এখন মাত্র ২০/২৫ টি মাহালী সম্প্রদায়ের পরিবার বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এশিল্প কে বাঁচিয়ে রেখেছে।

চালনা, কুলা, ডালি,ঝুঁড়িসহ কোপরা,টোপা,খিল ঝাড়ু,খারি,মাছ ধরার পোলয়,ভাত ঝাপা,গরুর মুখারী প্রভৃতি সামগ্রী বানিয়ে হাট বাজারে বিক্রি করে কোন রকম জীবন যাপন করছে।

এ পেশায় ৩০ বছর ধরে নিয়োজিত এক কর্মজীবী নারী জানান, দীর্ঘ বাপ-দাদার হাত ধরে এ পেশায় আসা। এখানকার পরিবার গুলোর দারিদ্রতা তাদের নিত্য সঙ্গী। দু’চালা ঘর ছাড়া তাদের কোন জায়গা-জমি নেই। সব সময় অভাব অনটন থাকায় জীবন নির্বাহ করা খুবই কষ্টের।
বাঁশ শিল্প বদলাতে পারেনি তাদের ভাগ্য। তাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। বাঁশ ঝাড়ের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে যাওয়ায় বাঁশের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১টি বাঁশ দিয়ে ২ দিনে ৬/৭ টি খিল ঝাড়ু তৈরি করা যায়। এগুলো বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।তাছাড়া দূরের গ্রাম থেকে ঘুড়ে ঘুড়ে বাঁশ সংগ্রহ করে আনতে হয়।

বাঁশের সামগ্রী বানানোর জন্য মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাঁশ সংগ্রহ করে কাজ করা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ পেশায় থাকা বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কোরপা ১২৫ টাকা, ডালি ৫০ টাকা, কুলা ৫০/৬০ টাকা, টোপা ৮০ টাকা, খিল ঝাড়ু ৫০ টাকা, হাত চালন ৫০ টাকা, মাছ খোলই ৭০টাকা, মাছের পোলয় বড় ২০০ টাকা, ছোট পোলয় ১০০/১২০ টাকা, ভাত ঝাপা ৩০ টাকা, গরুর মোখারি ৫০ টাকা। প্রকার ভেদে এক একটি পণ্য থেকে সর্বোচ্চ দশ টাকা থেকে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত আয় হয় । আর এ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম জীবন নির্বাহ করে বলে জানান।

এ বিষয়ে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাকসুদ হোসেন জানান, বাঁশশিল্প আমাদের দেশীয় লোক সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের স্বতন্ত্রতার প্রকাশ। বাঁশের তৈরী সবকিছুই মনকাড়া ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন কে স্পর্শ করে প্রতিনিয়ত। গ্রাম ও শহরে বাঁশের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাঁশ দিয়ে প্রয়োজনীয় ও সৌখিন বিভিন্ন জিনিস বানানো হয়। সরকারী সহযোগীতা পেলে হয়তো এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

ফেসবুকে👍আপনার_বিজ্ঞাপন

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বাঁশ শিল্প বদলাতে পারেনি তাদের ভাগ্য

০১:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

আলোকিত শীতলক্ষ্যা : নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার বাঁশের তৈরী সামগ্রীগুলো যেন তাদের কদর হারাতে বসেছে। বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্ধ এলাকা হতে একসময় বিপুল পরিমাণ বাঁশের সামগ্রী এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা এসে নিয়ে যেতো। ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বাঁশ শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে।

জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ-ঝাড় উজার হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা। মূল্যবৃদ্ধি, বাঁশের দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে বিদায় জানাতে বসেছে। এভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ শিল্প। তাছাড়া সুবিধা করতে না পেরে এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছে অন্য পেশায়।

বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউপির লাঙ্গলবন্ধের পাড়া গ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের পণ্যসামগ্রী বানানো চলছে। পরিবারের বিভিন্ন বয়সী লোকজন এ কাজ করছেন। এখানে অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ পরিবার এই শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও এখন মাত্র ২০/২৫ টি মাহালী সম্প্রদায়ের পরিবার বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এশিল্প কে বাঁচিয়ে রেখেছে।

চালনা, কুলা, ডালি,ঝুঁড়িসহ কোপরা,টোপা,খিল ঝাড়ু,খারি,মাছ ধরার পোলয়,ভাত ঝাপা,গরুর মুখারী প্রভৃতি সামগ্রী বানিয়ে হাট বাজারে বিক্রি করে কোন রকম জীবন যাপন করছে।

এ পেশায় ৩০ বছর ধরে নিয়োজিত এক কর্মজীবী নারী জানান, দীর্ঘ বাপ-দাদার হাত ধরে এ পেশায় আসা। এখানকার পরিবার গুলোর দারিদ্রতা তাদের নিত্য সঙ্গী। দু’চালা ঘর ছাড়া তাদের কোন জায়গা-জমি নেই। সব সময় অভাব অনটন থাকায় জীবন নির্বাহ করা খুবই কষ্টের।
বাঁশ শিল্প বদলাতে পারেনি তাদের ভাগ্য। তাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। বাঁশ ঝাড়ের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে যাওয়ায় বাঁশের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১টি বাঁশ দিয়ে ২ দিনে ৬/৭ টি খিল ঝাড়ু তৈরি করা যায়। এগুলো বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।তাছাড়া দূরের গ্রাম থেকে ঘুড়ে ঘুড়ে বাঁশ সংগ্রহ করে আনতে হয়।

বাঁশের সামগ্রী বানানোর জন্য মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাঁশ সংগ্রহ করে কাজ করা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ পেশায় থাকা বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কোরপা ১২৫ টাকা, ডালি ৫০ টাকা, কুলা ৫০/৬০ টাকা, টোপা ৮০ টাকা, খিল ঝাড়ু ৫০ টাকা, হাত চালন ৫০ টাকা, মাছ খোলই ৭০টাকা, মাছের পোলয় বড় ২০০ টাকা, ছোট পোলয় ১০০/১২০ টাকা, ভাত ঝাপা ৩০ টাকা, গরুর মোখারি ৫০ টাকা। প্রকার ভেদে এক একটি পণ্য থেকে সর্বোচ্চ দশ টাকা থেকে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত আয় হয় । আর এ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম জীবন নির্বাহ করে বলে জানান।

এ বিষয়ে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাকসুদ হোসেন জানান, বাঁশশিল্প আমাদের দেশীয় লোক সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের স্বতন্ত্রতার প্রকাশ। বাঁশের তৈরী সবকিছুই মনকাড়া ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন কে স্পর্শ করে প্রতিনিয়ত। গ্রাম ও শহরে বাঁশের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাঁশ দিয়ে প্রয়োজনীয় ও সৌখিন বিভিন্ন জিনিস বানানো হয়। সরকারী সহযোগীতা পেলে হয়তো এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"