নারায়ণগঞ্জ ১২:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেই অজ্ঞাত ধর্ষক যেভাবে গ্রেফতার হলো

 অনলাইন ভার্সন
  • ১১:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৫১৮

"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

আলোকিত শীতলক্ষ্যা রিপোর্ট : অভাবের সংসার। চারিদিকে হাহাকার। কোন দিকবিদিক পাচ্ছেনা গৃহবধু। সংসারের টানাপোড়নে খুঁজতে থাকেন একটি কাজ। লেখাপড়া জানেন না। অসুস্থ স্বামী, কাজ করতে পারলে সংসারে খাবার জুটে, না করলে উপোস থাকতে হয়।

শুনেছেন মহিলারা গার্মেন্টসে চাকুরি করে সংসার চালায়। চাকুরির খোঁজে সোনারগাঁয়ের কলতাপড়া থেকে ছুটে আসেন বন্দরের মদনপুরে। সেখানে সবাই অপরিচিত। দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই গৃহবধু। এক পর্যায়ে পরিচয় এক অজ্ঞাত এক লম্পটের সাথে। চাকুরি দেয়ার আশ্বান দেয় সে।

ওই গৃহবধুকে বলে সে মদনপুরে ইপিলিয়ন গার্মেন্টসে চাকুরী করে। সেখানে তাকে চাকুরি দিবে। এক পর্যায়ে চাকুরি দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায় মদনপুরের ফুলহরস্থ জনৈক হাজী আলাউদ্দিন মিয়া টিনসেড ঘরের পূর্ব পাশের এক খালি ঘরে।

সেদিন ছিলো মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি)। এরপর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আটকে রেখে গৃহবধুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষন করে। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কি-করবেন-ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। ছুটে গেলেন বন্দর থানায়। সবকিছু শুনে পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করলো।

ওই গৃহবধু অভিযুক্ত আসামীর নাম জানতে না পাড়ায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু করেন। তাৎক্ষনিকভাবে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ দিপক চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক আজিজুর রহমান ও এসআই সিরাজদৌল্লাহসহ মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এরপর প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরেই শুরু হয় তদন্ত। চলতে থাকে প্রযুক্তির সাথে পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশলের মিশেল। ধর্ষক সনাক্তকরণ ও তার অবস্থান জানার নিরন্তর চেষ্টা চলছে দিনরাত। শেষ পর্যন্ত মদনপুরস্থ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের আশপাশে সমস্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে ধর্ষককে সনাক্তে সক্ষম হয় পুলিশ।

অভিযুক্ত আসামী শনাক্ত করতে ধর্ষিতা গৃহবধুকে দেখানো হয়। গৃহবধু ধর্ষককে শনাক্ত করলেও জানা যায়নি তার নাম ঠিকানা। আবারও পাল্টে যায় তদন্তের কৌশল। সিসি ফুটেজের ছবি নিয়ে মাফে নেমে পড়ে পুলিশ। এবার এক হোটেল ব্যবসায়ী ওই আসামীর পোশাক দেখে তাকে শনাক্ত করে। হোটেলে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ার সময় ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম্বারটি সংগ্রহ করে হোটেল মালিক।

পরে ওই মোবাইল নাম্বারের সুত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীর অবস্থান জেনে রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও বন্দর থানায় ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রূপগঞ্জ থানা এলাকায় একটি টার্গেটকে নির্দিষ্ট করে অভিযান চালায় বন্দর পুলিশের একটি চৌকস দল।

সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় ধর্ষকককে। তার নাম মো. বাদশা ওরফে সোহাগ ওরফে ছোট (৩৫)। সে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানার মো. আব্দুল মতিন@ মতির ছেলে। গ্রেফতারের পর সে ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করেছে এবং ভিকটিম কর্তৃক সনাক্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিপক চন্দ্র সাহা জানান, আমরা অত্যন্ত সুচারুভাবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ধর্ষককে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজ-উদ-দৌলা এর সহযোগিতায় কাজ করেন বন্দর থানার অন্যান্য অফিসার ও জেলা আইসিটি শাখা।

ঘটনার স্থান মদনপুর মোড় এলাকাটি অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। আসামি সনাক্ত করতে অনেক চেষ্টা করে একটি ছোট্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশলে অজ্ঞাত আসামি সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তদন্তকারী দল।

এদিকে, একটি জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনায় যেমন হতবাক হয়েছিল, তেমনই দ্রুত আসামি সনাক্ত ও গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম (বার)।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

ফেসবুকে👍আপনার_বিজ্ঞাপন

সেই অজ্ঞাত ধর্ষক যেভাবে গ্রেফতার হলো

১১:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

আলোকিত শীতলক্ষ্যা রিপোর্ট : অভাবের সংসার। চারিদিকে হাহাকার। কোন দিকবিদিক পাচ্ছেনা গৃহবধু। সংসারের টানাপোড়নে খুঁজতে থাকেন একটি কাজ। লেখাপড়া জানেন না। অসুস্থ স্বামী, কাজ করতে পারলে সংসারে খাবার জুটে, না করলে উপোস থাকতে হয়।

শুনেছেন মহিলারা গার্মেন্টসে চাকুরি করে সংসার চালায়। চাকুরির খোঁজে সোনারগাঁয়ের কলতাপড়া থেকে ছুটে আসেন বন্দরের মদনপুরে। সেখানে সবাই অপরিচিত। দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই গৃহবধু। এক পর্যায়ে পরিচয় এক অজ্ঞাত এক লম্পটের সাথে। চাকুরি দেয়ার আশ্বান দেয় সে।

ওই গৃহবধুকে বলে সে মদনপুরে ইপিলিয়ন গার্মেন্টসে চাকুরী করে। সেখানে তাকে চাকুরি দিবে। এক পর্যায়ে চাকুরি দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায় মদনপুরের ফুলহরস্থ জনৈক হাজী আলাউদ্দিন মিয়া টিনসেড ঘরের পূর্ব পাশের এক খালি ঘরে।

সেদিন ছিলো মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি)। এরপর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আটকে রেখে গৃহবধুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষন করে। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কি-করবেন-ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। ছুটে গেলেন বন্দর থানায়। সবকিছু শুনে পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করলো।

ওই গৃহবধু অভিযুক্ত আসামীর নাম জানতে না পাড়ায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু করেন। তাৎক্ষনিকভাবে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ দিপক চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক আজিজুর রহমান ও এসআই সিরাজদৌল্লাহসহ মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এরপর প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরেই শুরু হয় তদন্ত। চলতে থাকে প্রযুক্তির সাথে পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশলের মিশেল। ধর্ষক সনাক্তকরণ ও তার অবস্থান জানার নিরন্তর চেষ্টা চলছে দিনরাত। শেষ পর্যন্ত মদনপুরস্থ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের আশপাশে সমস্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে ধর্ষককে সনাক্তে সক্ষম হয় পুলিশ।

অভিযুক্ত আসামী শনাক্ত করতে ধর্ষিতা গৃহবধুকে দেখানো হয়। গৃহবধু ধর্ষককে শনাক্ত করলেও জানা যায়নি তার নাম ঠিকানা। আবারও পাল্টে যায় তদন্তের কৌশল। সিসি ফুটেজের ছবি নিয়ে মাফে নেমে পড়ে পুলিশ। এবার এক হোটেল ব্যবসায়ী ওই আসামীর পোশাক দেখে তাকে শনাক্ত করে। হোটেলে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ার সময় ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম্বারটি সংগ্রহ করে হোটেল মালিক।

পরে ওই মোবাইল নাম্বারের সুত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীর অবস্থান জেনে রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও বন্দর থানায় ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রূপগঞ্জ থানা এলাকায় একটি টার্গেটকে নির্দিষ্ট করে অভিযান চালায় বন্দর পুলিশের একটি চৌকস দল।

সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় ধর্ষকককে। তার নাম মো. বাদশা ওরফে সোহাগ ওরফে ছোট (৩৫)। সে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানার মো. আব্দুল মতিন@ মতির ছেলে। গ্রেফতারের পর সে ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করেছে এবং ভিকটিম কর্তৃক সনাক্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিপক চন্দ্র সাহা জানান, আমরা অত্যন্ত সুচারুভাবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ধর্ষককে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজ-উদ-দৌলা এর সহযোগিতায় কাজ করেন বন্দর থানার অন্যান্য অফিসার ও জেলা আইসিটি শাখা।

ঘটনার স্থান মদনপুর মোড় এলাকাটি অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। আসামি সনাক্ত করতে অনেক চেষ্টা করে একটি ছোট্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশলে অজ্ঞাত আসামি সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তদন্তকারী দল।

এদিকে, একটি জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনায় যেমন হতবাক হয়েছিল, তেমনই দ্রুত আসামি সনাক্ত ও গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম (বার)।


"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"