নারায়ণগঞ্জে ৬ মামলায় ৬৮০ আসামি, গ্রেপ্তার আতঙ্ক
- ১২:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
- / ৫৮৩
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকল বাধা উপেক্ষা করে তারা গণসমাবেশকে সফল করতে দফায় দফায় প্রস্তুতিমূলক সভা করছে দলটির নেতাকর্মীরা।
তবে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলার শিকারও হয়েছেন। নতুন করে দায়ের হচ্ছে মামলা, চলছে গ্রেপ্তারও। দায়েরকৃত মামলাগুলোকে গায়েবী মামলা বলছেন বিএনপির নেতারা।
আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর, ককটেল উদ্ধার, মশাল মিছিল ও বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থানায় পৃথক পৃথক ভাবে নতুন করে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামীর সংখ্যা ৬৮০ জন।
তবে দলটির নেতাকর্মীদের আশঙ্কা-সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগে বাড়বে মামলা-হামলা ও গ্রেফতার। বিশেষ করে ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে এ মাত্রা আরও বাড়তে পারে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরোনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই অধিকাংশ নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ নভেম্বর সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় মেঘনা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ ও তার ছোট ভাই পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিলসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ১৫ জনকে। আর গত ১৯ নভেম্বর কাচঁপুর ও মেঘনা ব্রীজের নামফলক ভাঙচুর ও পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে জিডি করেছিলো সওজ। এতে পুলিশি তদন্ত চলমান।
গত ১৯ নভেম্বর ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী মো. সোহেল বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ২৪ জনের নাম উল্লেখ্য সহ আরো ৩০জনকে আসামী করা হয়। এ মামলায় ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২২ নভেম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের পক্ষে আদালতপাড়ায় সমর্থকদের মিছিল ও সড়কে বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে বিএনপির ৩৪ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে এসআই শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলায় দায়ের করেন। এ মামলায় কোন গ্রেপ্তার না হয়নি।
গত ২৬ নভেম্বর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নাশকতার প্রস্তুতি নিতে এক নেতার বাসায় গোপন বৈঠক করছেন বলে খবর পায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ৷ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় অভিযান চালালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়৷ পালিয়ে যাবার সময় আসামিদের ধরতে গিয়ে ধস্তাধস্তিতে পুলিশের এক সদস্য আহত হন৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আত্মরক্ষার্থে ১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ৷ পরে রবিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশের মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই রাজু (৫৫), সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ হালিম জুয়েল (৬০), মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব মমতাজ উদ্দিন মন্তু (৫৫), সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা টিএইচ তোফা (৫১), তৈয়ব আলীসহ (৫১) ২১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ ও ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেল আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। তবে এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
একইদিন শনিবার ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মদনপুর আড়াইহাজার সড়কে ছাত্রদল একটি মশাল মিছিল বের করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়৷ ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছাত্রদলের ১জনকে আটক করে৷ এ সময় ৬২টি মশাল উদ্ধার করা হয়৷ পরে রোববার সকালে আড়াইহাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন মিয়া বাদী হয়ে নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন৷
বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা ওই মামলাতেও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে৷ মামলায় আড়াইহাজার থানা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী মেম্বার, ছাত্রদলের সভাপতি জুবায়ের রহমান দিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি বাচ্চু মিয়াসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত ৫০-১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সর্বশেষ সোমবার (২৮ নভেম্বর) রূপগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন ছাত্রলীগ কর্মী রাশেদুল প্রধান। মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
ছাত্রদলের মিছিল থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী রাশেদুল প্রধানের ওপর হামলা ও তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতাদের নামে এ মামলা করেন রাশেদুল। হামলায় আহত ছাত্রলীগকর্মীর হাত ভেঙে ফেলার চেষ্টা ও তার হাতে ছয়টি সেলাই লাগে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, নিজেরাই পুরাতন একটি মোটরসাইকেল এনে পুড়িয়ে দিয়ে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ নেতারা নিজেরা মোটরসাইকেল পুড়িয়েছে ভিডিওসহ এমন প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন জানান, এটি একেবারে সাজানো ঘটনা। আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে আমাদের গ্রেপ্তার করতে ও ভয়ভীতি দেখাতে এসব মামলা।
তারা নিজেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। সেই ভিডিও আমাদের কাছে আছে। এসব নাটক করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আশা করছি, এসব মিথ্যা মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতাদের হয়রানি করবে না।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনপীড়ন, নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামি করা হচ্ছে। ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বানচাল করতে ক্ষমতাসীনরা স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে।
ইতোমধ্যে আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে গণসমাবেশ বানচাল করা যাবে না। ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল হামলা মামলা গ্রেপ্তার আতঙ্ক অপেক্ষা করেই গণসমাবেশকে সফল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যে ৫টি থানায় পৃথক পৃথক ভাবে নতুন করে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আতঙ্কে এবং পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা তাদের আইনি সহায়তা দিচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গত ২৭ নভেম্বর জেলা বিএনপির প্রস্তুতিমূলক সভায় বলেছিলেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভয় পায়। তারা বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার সাহস অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে।
তাই তারা পুলিশের উপর ভর করে মামলা হামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে দমিয়ে রাখতে চাইছে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে।
আর এই কাজটা করেছে এই অবৈধ মিডনাইট সরকার। তাই এ সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। সে লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সফল করে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে হবে, সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে দেশের মানুষের আস্থা আর তাদের উপর নেই।