১১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রূপগঞ্জে হালিমা-স্বপন দম্পতিকে প্রশাসনের দেয়া সেই অটোরিকশা ছিনতাই হয়ে গেছে

  • ০২:৩৩:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৩৮৩

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চরম দারিদ্র্যের কারণে হাসপাতালে যেতে না পেরে একাই সন্তান জন্ম দেওয়া সেই হালিমা বেগম ও স্বপন মিয়া দম্পতির অটোরিকশাটি ছিনতাই হয়েছে। গত বৃহম্পতিবার ভোরে উপজেলার গোলাকান্দাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে রিকশাচালক স্বপন মিয়াকে মারধর করে ছিনতাইকারীরা রিকশাটি নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেলে স্বপন মিয়া রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

স্বপন মিয়া স্বপ্ন ভেঙ্গে এখন দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি ফিরে পেতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বপন মিয়া। ছিনতাই হওয়ার চার দিন পার হয়ে গেলেও অটোরিকশাটি উদ্ধার হয়নি।

স্বপন মিয়া জানান গত গত (১৫ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার গোলাকান্দাইল থেকে অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে বালিয়াপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় গোলাকান্দাইল হাট সংলগ্ন ব্রীজের কাছে গিয়ে যাত্রীবেসে ৫ ছিনতাইকারী স্বপনকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে।

এসময় তাকে মারধর করে অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা করলে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা। পরে স্বপন মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হকের কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ইউএনও তাঁদের রিকশা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার অশ্বাস দেন।

এদিকে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রিকশা ছিনতাইয়ের পর স্বপন মিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছিনতাইকারীদের মারধরের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত তিন দিন কোনো কাজ না করায় ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। রিকশাটি ফিরে না পেলে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

স্বপন মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, পায়ে চালিত অটোরিকশায় এখন আর কেউ উঠেনা। তাই সহযোগীতা পাওয়া টাকা দিয়ে ব্যটারি লাগিয়ে অটোরিকশায় রুপান্তর করা হয়। অটোরিকশা চালিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা আয় করতেন স্বামী স্বপন। ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় এখন আবার সেই অভাব অনটনেই পড়ে গেলেন।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, পুলিশ রিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা করছে। বিষয়টি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভোরবেলা অনেক কুয়াশা থাকায় ক্যামেরায় খুব বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। আশা করছি, আমরা খুব দ্রুতই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে রিকশাটি উদ্ধার করতে পারব।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার জগন্নাথপুর এলাকার মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদের ছেলেস্বপন মিয়া। তিনি স্ত্রী হালিমা ও ৪ সন্তানকে নিয়ে উপজেলার মাহনা এলাকার ইউপি সদস্য ডলি আক্তারের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে অভাব-অনটনে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিলো স্বপনের।

এমনকি ছোট শিশুটিকে দুধ খেতে দিতে পারেনি। স্ত্রী-সন্তানদের ভরনপোষণ করতে না পেরে গাজিপুরের আকরাম নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ছোট সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেন। অভাব অনটনের বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক আনুষ্ঠানিক ভাবে কর্মের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি রিকশা এবং নগদ ২০ হাজার টাকা দেন। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন স্থান থেকেও আর্থিক সহযোগীতা করেন। পরে ওই রিকশাটিকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় রুপান্তরিত করেন স্বপন মিয়া। এরপর থেকেই স্বপন মিয়ার সংসার ভালোই চলছিলো।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

রূপগঞ্জে হালিমা-স্বপন দম্পতিকে প্রশাসনের দেয়া সেই অটোরিকশা ছিনতাই হয়ে গেছে

০২:৩৩:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চরম দারিদ্র্যের কারণে হাসপাতালে যেতে না পেরে একাই সন্তান জন্ম দেওয়া সেই হালিমা বেগম ও স্বপন মিয়া দম্পতির অটোরিকশাটি ছিনতাই হয়েছে। গত বৃহম্পতিবার ভোরে উপজেলার গোলাকান্দাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে রিকশাচালক স্বপন মিয়াকে মারধর করে ছিনতাইকারীরা রিকশাটি নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেলে স্বপন মিয়া রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

স্বপন মিয়া স্বপ্ন ভেঙ্গে এখন দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি ফিরে পেতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বপন মিয়া। ছিনতাই হওয়ার চার দিন পার হয়ে গেলেও অটোরিকশাটি উদ্ধার হয়নি।

স্বপন মিয়া জানান গত গত (১৫ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার গোলাকান্দাইল থেকে অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে বালিয়াপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় গোলাকান্দাইল হাট সংলগ্ন ব্রীজের কাছে গিয়ে যাত্রীবেসে ৫ ছিনতাইকারী স্বপনকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে।

এসময় তাকে মারধর করে অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, কোন প্রকার মামলা মোকদ্দমা করলে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা। পরে স্বপন মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হকের কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ইউএনও তাঁদের রিকশা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার অশ্বাস দেন।

এদিকে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রিকশা ছিনতাইয়ের পর স্বপন মিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছিনতাইকারীদের মারধরের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত তিন দিন কোনো কাজ না করায় ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। রিকশাটি ফিরে না পেলে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

স্বপন মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, পায়ে চালিত অটোরিকশায় এখন আর কেউ উঠেনা। তাই সহযোগীতা পাওয়া টাকা দিয়ে ব্যটারি লাগিয়ে অটোরিকশায় রুপান্তর করা হয়। অটোরিকশা চালিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা আয় করতেন স্বামী স্বপন। ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় এখন আবার সেই অভাব অনটনেই পড়ে গেলেন।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, পুলিশ রিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা করছে। বিষয়টি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভোরবেলা অনেক কুয়াশা থাকায় ক্যামেরায় খুব বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। আশা করছি, আমরা খুব দ্রুতই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে রিকশাটি উদ্ধার করতে পারব।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার জগন্নাথপুর এলাকার মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদের ছেলেস্বপন মিয়া। তিনি স্ত্রী হালিমা ও ৪ সন্তানকে নিয়ে উপজেলার মাহনা এলাকার ইউপি সদস্য ডলি আক্তারের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে অভাব-অনটনে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিলো স্বপনের।

এমনকি ছোট শিশুটিকে দুধ খেতে দিতে পারেনি। স্ত্রী-সন্তানদের ভরনপোষণ করতে না পেরে গাজিপুরের আকরাম নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ছোট সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেন। অভাব অনটনের বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক আনুষ্ঠানিক ভাবে কর্মের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি রিকশা এবং নগদ ২০ হাজার টাকা দেন। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন স্থান থেকেও আর্থিক সহযোগীতা করেন। পরে ওই রিকশাটিকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় রুপান্তরিত করেন স্বপন মিয়া। এরপর থেকেই স্বপন মিয়ার সংসার ভালোই চলছিলো।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন