ফরিদপুর-১ আসনে শেষ ঘণ্টায় ব্যাপক জালভোট, সব নৌকার পক্ষে
- ০৫:০২:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৬৮৩
নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে ব্যাপক জালভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটগ্রহণের শেষ ঘণ্টায় ১৯৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই নৌকা প্রতীকে এসব জালভোট দেওয়া হয়।
রবিবার ভোটগ্রহণ শুরুর পর সরেজমিনে মধুখালীর কামালদিয়া ইউনিয়নের কামালদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, নৌকা প্রতীক ছাড়া আর কোনো প্রতীকের এজেন্ট নেই। যারা ভোট দিতে আসছেন কেন্দ্রের বাইরে নৌকার কর্মীরা তাদেরকে টাকাও দিচ্ছেন। বিদেশে থাকেন এবং মৃত ব্যক্তিদের ভোটও এখানে সম্পন্ন দেখা গেছে। অর্থাৎ কেন্দ্রটিতে জালভোট ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
দুপুর দুইটার দিকে বোয়ালমারীর সূর্যগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জালভোটের অভিযোগ তোলেন ঈগলের এজেন্ট। তবে তা অস্বীকার করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। অভিযোগ জানালে বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই কেন্দ্রে এসে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সরিয়ে আরেক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।
বিকালের দিকে বোয়ালমারী ও মধুখালীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর আসতে থাকে। আর তিনটার দিকে মোটামুটি বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে ঈগলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে তারা দাবি করেন। তাদের ভাষ্য মতে, বিকাল ৩টা থেকে ৪টা এই এক ঘণ্টার মধ্যে নৌকার জালভোট সম্পন্ন করা হয়।
বোয়ালমারী ও মধুখালীর বেশিরভাগ কেন্দ্রই বিকাল ৩টার পর সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলিতে ঈগলের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রের সামনে নৌকার কর্মীদের জটলা পাকিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। এসময় কেন্দ্রগুলিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল শূন্য।
ঈগল মার্কার এজেন্টরা অভিযোগ করেন, তাদের বের করে দিয়ে নৌকার কর্মীরা একেকজন ব্যক্তিকে দিয়ে নৌকা প্রতীকে ইচ্ছা মতো ভোট দেওয়ান। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের একেকজনকে টাকা দিয়ে হাত করে ব্যালট কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
মধুখালীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে ঈগলের কর্মীদের দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো কোনো এজেন্টকে চুপ থাকতে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কয়েকজনকে মারধর করার অভিযোগও পাওয়া যায়।
ভোট চলাকালীন প্রতিবেদক ফরিদপুর-১ আসনের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আভাস পান ঈগল মার্কায় ভোটারদের আগ্রহ বেশি। এই প্রতীকের প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন গোটা অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা।
দোলনের প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান আগে থেকেই এলাকায় কম জনপ্রিয়। এমনকি তার দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বেশিরভাগও নির্বাচনকালীর প্রচারের সময় দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকা দোলন ভোটে বিজয়ী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে বিকালেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ভোটের শেষ ঘণ্টা কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম ও নৌকার পক্ষে ব্যাপক কারচুপির খবর আসতে থাকে। কোথাও কোথাও অভিযোগ পাওয়ার পরও প্রশাসনকেও নির্বিকার থাকতে দেখা যায়।
ফরিদপুর-১ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ঢাকা টাইমস সম্পাদক ও কাঞ্চন মুন্সী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলনসহ মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যরা হলেন- নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, বিএনএমের নোঙর প্রতীকের শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের আক্তারজ্জামান খান এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির একতারা প্রতীকের নুর ইসলাম সিকদার।
বেসরকারিভাবে ফলাফলে নৌকা প্রতীকের আব্দুর রহমান ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন পান ৮৪ হাজার ৯৮৯টি ভোট।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮১ জন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তিনটি উপজেলার ১৯৬টি কেন্দ্রে যথাক্রমে বোয়ালমারীতে ৫৩.৫৫, মধুখালীতে ৪৩.১৭ ও আলফাডাঙ্গায় ৫৩.২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।