ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ ফেরদাউসের নেতৃত্ব ও বিতর্কিত আমলনামায় ক্ষুব্দ না.গঞ্জ হেফাজত
- ০৬:৪৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৬৯
বিশেষ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী সমাবেশ করে ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। সেই নির্বাচনী সমাবেশে সেলিম ওসমান ভোট চাইছেন ও পাশে দাঁড়ানো ফেরদাউসের ছবি ভিডিও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে লাইভ হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছিল। সেই নির্বাচনী প্রচারণার ভিডিও এখনো আছে এসব মাধ্যমে।
বিপুল পরিমান অর্থ ওসমান পরিবার থেকে নিয়ে বিতর্কিত সেই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালান ফেরদাউস। সেলিম ওসমানের সাথে নির্বাচনী সভায় একই মঞ্চে একাধিকবার দেখা গেছে এই হেফাজত নেতাকে।
নারায়ণগঞ্জ শহরে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ছোট ভাই হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ফেরদাউস। অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়ার পরেও ফেরদাউসের নির্বাচনী সভায় অংশ নেয়াতে হেফাজতের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনা দেখা গিয়েছিল সেসময়। নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামি দাবি করা ফেরদাউস ও তার অনুগতদের শামীম ওসমানের আশির্বাদে গ্রেপ্তার রিমান্ডের শিকার হতে হয়নি।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে হেফাজতকে কন্ট্রোলে রাখতে ফেরদাউসকে বিভিন্নভাবে সুবিধা দিয়েছেন শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। আর্থিকসহ নানা সুবিধা নিয়ে বিগত সময়ে সরকারবিরোধী নানান আন্দোলনে হেফাজতকে নিষ্ক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করেছেন ফেরদৌস।
নারায়ণগঞ্জ হেফাজতকে কন্ট্রোল করতে বিভিন্ন সময় শামীম ওসমানের প্রভাব ও প্রশাসনকে ব্যাবহার করেছে এই নেতা। ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামতে গেলেই প্রশাসনকে ব্যাবহার করে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন নেতাকর্মীদের।
একটি সূত্র জানায়, গত ২২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন শামীম কবির নামে এক ব্যক্তি। ব্যক্তিগত আক্রোশে আসামি করে জেদ মেটানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মামলার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নেয়ার জন্যই এ মামলা করেছে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এবং মামলার বর্তমান কার্যক্রমগুলোকে বিতর্কিত করতে ও হেফাজতের কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করতে এবং শামীম ওসমানের নাম থাকায় মামলাকে বিতর্কিত করতে নিরীহ ব্যক্তিদের একই মামলায় আসামি করে এই মামলা দায়ের করান ফেরদাউস নিজে। তিনি শামীম ওসমানের সাথে বিভিন্ন সময়ে একসাথে বিভিন্ন কর্মসূচী করার পাশাপাশি তার সাথে ওসমান পরিবারের নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
শামীম ওসমানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আইভীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও সেলিম ওসমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্দরের এক স্কুলের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মসূচী পালন সহ বিভিন্ন কর্মকান্ড করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি সর্বশেষ সেলিম ওসমানের সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছিলেন যেখানে হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতাকে ডেকেছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানের লাইভও করেছিল স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম। সেখানে মুখে কাপড় দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও তা পারেননি তিনি।
শামীম ওসমানের বাড়িতে রাত হলেই মাসে অন্তত একবার ফেরদাউসের আনাগোনা দেখা যেত বলে স্থানীয়রা জানান। রাতে নীরবে একাকী ফেরদাউস কিংবা সাথে একজন নিয়ে তিনি আসতেন শামীম ওসমানের বাড়িতে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, জমিয়ত ইসলামের মুফতি মনির হোসেন কাসেমী যখন নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের নির্বাচন করে তখন শামীম ওসমানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মনির হোসেন কাসেমীর পাশে থেকে তার সকল তথ্য ওসমান পরিবারকে সরবরাহ করেন এই মাওলানা ফেরদাউস।
ওসমান পরিবারের দুই প্রভাবশালী সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের সাথে মাওলানা ফেরদাউসের একাধিক ঘনিষ্ঠ ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মাওলানা ফেরদাউসকে নিয়ে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতার ব্যানারে তার গ্রেপ্তার দাবি করে ব্যানার টানানো হয়েছে ৫ আগস্টের পর থেকে। সেখানে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে তার বিভিন্ন ছবিও দেয়া আছে।
ওসমান পরিবারের নির্দেশে ৫ আগস্টের আগে জুলাই থেকে শুরু হওয়া টানা আন্দোলনে একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। তাকে ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জের আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় দেখা যায়নি। সাধারণ কর্মসূচীতে থাকলেও ছাত্র জনতার পাশে ছিলেন না তিনি। একদিনের জন্যও ছাত্র জনতার পাশে চাষাঢ়ায় আসেননি এই নেতা, এমনকি হেফাজতের নেতাদেরকেও তিনি আসতে নিষেধ করতেন এমন অভিযোগও আছে। এমনকি ৫ আগস্ট ঢাকায় নিজেও যাননি এবং তার অনুগত নেতাকর্মীদের যেতেও নিষেধ করেছিলেন ফেরদাউস। তবে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে হেফাজতের ব্যানারে সবচেয়ে বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেন এ নেতা।
একজন আলেম হিসেবে পরিচয় দিলেও কারো সাথে কথা বলতে গেলে মুখে অশালীন গালি অনর্গল বের হয় ফেরদাউসের মুখ থেকে। মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে গেলেও এ ধরনের গালির ব্যবহার করেন তিনি। এরকম একাধিক কল রেকর্ডও আছে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে। তার এহেন কর্মকান্ড হেফাজতের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
হেফাজতে ইসলামের জেলা ও মহানগর এবং সোনারগাঁ থানার একাধিক নেতা জানান, মামুনুল হকের সোনারগাঁয়ের ঘটনার পর রিসোর্টে হামলা ও ভাংচুরের মামলায় হেফাজতের ৪ নেতা মাওলানা ইকবাল, শাজাহান শিবলী, হাফেজ মোয়াজ্জেম হোসেন ও হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন খানকে র্যাব দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর পেছনে কাজ করেছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। রাজধানীর জুরাইন থেকে তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছিল র্যাব। সূত্র জানায়, সেদিন ৪ জন নয় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানসহ ৫ জন। পরে ফেরদাউসকে ছেড়ে দেয় র্যাব কারণ বাকি ৪ জনকে পরিকল্পনা করিয়ে ধরিয়ে দেন তিনি। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল মারা যান এদের একজন ইকবাল যাকে এখনো স্মরণ করেন মামুনুল হক। তাদের মৃত্যু ও গ্রেপ্তার জন্য দায়ী ফেরদাউসুরের বহিষ্কার চান হেফাজতের অনেক নেতা।
বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের আইনি কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করতে ও হেফাজতকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হেফাজতে ইসলামের সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি আলেম সমাজকে বির্তর্কিত করতে সক্রিয় কাজ করায় মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও তার সাথে জড়িত অনুসারীদের বহিষ্কার দাবি করেছেন হেফাজত ইসলামসব জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন ইসলামিক দলগুলো। এ ধরনের বিতর্কিত মামলা করে হেফাজতের পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তিনি ওসমান পরিবারের পরামর্শ শুনেও এ ধরনের কাজ করতে পারেন বলে ধারণা নেতাকর্মীদের।