০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষে আহত শতাধিক

উত্তাল নারায়ণগঞ্জ; বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর-সংঘর্ষ ও গুলি

  • ১১:০৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৫৮

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। শিক্ষার্থীরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে ভোর থেকেই বিক্ষোভ করছেন। এমনকি পাড়া মহল্লাতেও তারা অবস্থান নেন।

এতে নারায়ণগঞ্জের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল। বেলা বাড়ার সাথে হাজারো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিলে অচল পড়ে নারায়ণগঞ্জ।

এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আয়কর অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ও ঘটনা ঘটে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন তারা কোনো অগ্নিসংযোগ করেননি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের কেওঢালা বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরীর সামনে পৌঁছায়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হলে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। প্রায় তিন ঘন্টা সংঘর্ষে মদনপুর কেওঢালা এলাকায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে। এতে স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।

দিনভর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ ও গুলিতে শতাধিক ছাত্র. জনতা ও পুলিশ আহত হলেও কোনো প্রাণহানীর সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তথ্যমতে, রবিবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন গুরুত্ব পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণঞ্জ অংশের বন্দরের মদনপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোগ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে বাধা দেয়।

এদিকে আন্দোলনকারী বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকেও যোগ দিতে দেখা গেছে।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর করে। একপর্যায়ে ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে। পরে শিক্ষার্থীরাই এ আগুন নিভিয়ে ফেলে এবং মাইকে ঘোষণা দেয় তারা কোনো অগ্নিসংযোগ করেননি।

দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের সাথে জেলা ও মহানগর বিএনপির, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অংঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবন্দসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী অংশ গ্রহন করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ আয়কর অফিস ও জেলা পরিষদ কার্যালয় ভাংচুর করে। এ সময় তারা জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে একটি অটোতে অগ্নিসংযোগ করে। সড়কের পাশে পেট্রোল পাম্পে থাকা শীতল পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাংচুর করে।

পরে বেলা ১২ টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আইনশৃংখলাবাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে সতর্ক অবস্থানে দাড়ায়। সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বুজিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের দিকে গুলি ছোড়া হয়ে। এঘটনায় পথচারি, শিশু, পুলিশ আন্দোলণকারীসহ অর্ধ্বশতাধিক আহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও দুপুরের দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটীতে বিসিক শিল্পনগরী, কায়েমপুর, শিবু মার্কেট, ফতুল্লা পোস্ট অফিস রোড, হাজীগঞ্জ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা শ্রমিকদের বাইরে বেরিয়ে আসার আহবান জানায়। পরে মালিক পক্ষ গার্মেন্টস ছুটি দিয়ে দেয়।

এদিকে বিসিকে পোশাক কারখার ভাংচুর নিয়ে এক প্রতিষ্ঠানের মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, দু:খজনক, শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়েই কারখানায় হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। অনেকগুলো গার্মেন্টস ভাংচুর করেছে তারা।

আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। আজকে প্রথম দিন। কিন্তু সকাল থেকে মালিকরা গার্মেন্টস খোলা রাখে। তারা শ্রমিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান চালু রাখে। তাই শ্রমিকরা বাইরে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

এদিকে মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা অবস্থান নেন। এ সময় পুরো যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। তবে কোনো যানবাহন ভাঙচুর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি সাধন করেননি আন্দোলনকারীরা।

অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের কেওঢালা বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরীর সামনে পৌঁছায়। এসময় বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ সালামের নেতৃত্বে কয়েকশত নেতাকর্মী নিয়ে ছাত্র জনতার মিছিলে হামলা ও প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হলে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

প্রায় তিন ঘন্টা সংঘর্ষে মদনপুর কেওঢালা এলাকায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে। এতে স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়াও দুপুরের দিকে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় ইউনিয়ন যুবলীগ কার্যাল ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করাসহ একটি পরিত্যক্ত পুলিশ ফাঁড়ি, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম খাঁনের সিএনজি স্টেশন ও মহাসড়কের কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীদের একটি দল।

অন্যদিকে, দুপুর ৩টার দিকে ফতুল্লার পঞ্চবটিতে পুলিশ বক্সে ভাংচুর করে। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় হামলার চেষ্টা চালিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এতে একজন এসআই আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দুপুরে রাইফেল ক্লাবে দেয়া আগুন শিক্ষার্থীরা দেয়নি বলে দাবি করলেও বিকেলে আবারও রাইফেল ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসযঞ্জে পরিণত করে।

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সারা দেশে সাংবাদিক নিহত ও আহত হওয়ার প্রতিবাদে ফতুল্লায় মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদের তান্ডব ও সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষিত কারফিউতে জেলা জুড়ে বিরাজ করছে আতংক।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষে আহত শতাধিক

উত্তাল নারায়ণগঞ্জ; বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর-সংঘর্ষ ও গুলি

১১:০৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। শিক্ষার্থীরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে ভোর থেকেই বিক্ষোভ করছেন। এমনকি পাড়া মহল্লাতেও তারা অবস্থান নেন।

এতে নারায়ণগঞ্জের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল। বেলা বাড়ার সাথে হাজারো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিলে অচল পড়ে নারায়ণগঞ্জ।

এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আয়কর অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ও ঘটনা ঘটে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন তারা কোনো অগ্নিসংযোগ করেননি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের কেওঢালা বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরীর সামনে পৌঁছায়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হলে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। প্রায় তিন ঘন্টা সংঘর্ষে মদনপুর কেওঢালা এলাকায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে। এতে স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।

দিনভর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ ও গুলিতে শতাধিক ছাত্র. জনতা ও পুলিশ আহত হলেও কোনো প্রাণহানীর সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তথ্যমতে, রবিবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন গুরুত্ব পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণঞ্জ অংশের বন্দরের মদনপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোগ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে বাধা দেয়।

এদিকে আন্দোলনকারী বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকেও যোগ দিতে দেখা গেছে।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর করে। একপর্যায়ে ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে। পরে শিক্ষার্থীরাই এ আগুন নিভিয়ে ফেলে এবং মাইকে ঘোষণা দেয় তারা কোনো অগ্নিসংযোগ করেননি।

দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের সাথে জেলা ও মহানগর বিএনপির, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অংঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবন্দসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী অংশ গ্রহন করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ আয়কর অফিস ও জেলা পরিষদ কার্যালয় ভাংচুর করে। এ সময় তারা জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে একটি অটোতে অগ্নিসংযোগ করে। সড়কের পাশে পেট্রোল পাম্পে থাকা শীতল পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাংচুর করে।

পরে বেলা ১২ টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আইনশৃংখলাবাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে সতর্ক অবস্থানে দাড়ায়। সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বুজিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের দিকে গুলি ছোড়া হয়ে। এঘটনায় পথচারি, শিশু, পুলিশ আন্দোলণকারীসহ অর্ধ্বশতাধিক আহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও দুপুরের দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটীতে বিসিক শিল্পনগরী, কায়েমপুর, শিবু মার্কেট, ফতুল্লা পোস্ট অফিস রোড, হাজীগঞ্জ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা শ্রমিকদের বাইরে বেরিয়ে আসার আহবান জানায়। পরে মালিক পক্ষ গার্মেন্টস ছুটি দিয়ে দেয়।

এদিকে বিসিকে পোশাক কারখার ভাংচুর নিয়ে এক প্রতিষ্ঠানের মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, দু:খজনক, শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়েই কারখানায় হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। অনেকগুলো গার্মেন্টস ভাংচুর করেছে তারা।

আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। আজকে প্রথম দিন। কিন্তু সকাল থেকে মালিকরা গার্মেন্টস খোলা রাখে। তারা শ্রমিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান চালু রাখে। তাই শ্রমিকরা বাইরে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

এদিকে মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা অবস্থান নেন। এ সময় পুরো যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। তবে কোনো যানবাহন ভাঙচুর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি সাধন করেননি আন্দোলনকারীরা।

অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের কেওঢালা বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরীর সামনে পৌঁছায়। এসময় বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ সালামের নেতৃত্বে কয়েকশত নেতাকর্মী নিয়ে ছাত্র জনতার মিছিলে হামলা ও প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হলে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

প্রায় তিন ঘন্টা সংঘর্ষে মদনপুর কেওঢালা এলাকায় রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে। এতে স্থানীয় কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়াও দুপুরের দিকে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় ইউনিয়ন যুবলীগ কার্যাল ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করাসহ একটি পরিত্যক্ত পুলিশ ফাঁড়ি, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম খাঁনের সিএনজি স্টেশন ও মহাসড়কের কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীদের একটি দল।

অন্যদিকে, দুপুর ৩টার দিকে ফতুল্লার পঞ্চবটিতে পুলিশ বক্সে ভাংচুর করে। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় হামলার চেষ্টা চালিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এতে একজন এসআই আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দুপুরে রাইফেল ক্লাবে দেয়া আগুন শিক্ষার্থীরা দেয়নি বলে দাবি করলেও বিকেলে আবারও রাইফেল ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসযঞ্জে পরিণত করে।

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সারা দেশে সাংবাদিক নিহত ও আহত হওয়ার প্রতিবাদে ফতুল্লায় মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদের তান্ডব ও সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষিত কারফিউতে জেলা জুড়ে বিরাজ করছে আতংক।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন