আফসোস হচ্ছে, নিজের সন্তানকে ধ্বংস করে দিলেন : মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন
- ০৩:১৫:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
- / ৬৩৭
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, অনেকেই জোহা পরিবারের চামচামি করে রাজনীতি করেছেন, আপনারা কি আদৌ স্বপ্ন দেখছেন যে সেই পরিবারকে নিয়ে আবারো রাজনীতি আসবে, কখনোই না। এই পরিবারের দুইটা সন্তান ছিল আজমিরী এবং অয়ন ওসমান। তারা কিন্তু কোন দলে নাম লেখায় নি। তাদের রাখা হয়েছিল সন্ত্রাসী এবং অর্থ লুট পাটের জন্য। এই সন্তানদেরতো রাজনীতিতে বীজই বপন করেননি, তাহলে আগামীতে কে আসবে রাজনীতিতে। আজ আমার আফসোস হচ্ছে, নিজে কিভাবে নিজেদের সন্তানকে ধ্বংস করে দিলেন। রাজনীতিতে আসার আগেই শেষ।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় এমডব্লিউ স্কুল প্রাঙ্গনে মাদক-চাঁদাবাজী-সন্ত্রাস রোধে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায়ী সংগঠন করেছিল, সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাই এদের (আজমেরী-অয়ন) সাহায্য করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেশে সমাজে আসতে চায়, এতটা সহজ নয়। অনেকদিন খেলাধুলা করেছেন কিন্তু এখন বিপ্লব হয়েছে, এখন খেলাধুলা করতে এসে লাফ দিলে কারো দরকার হবে না আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে। এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে, সেখানে সভাপতি পালিয়ে গেছে।
কিন্তু সহ সভাপতি এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য বিবৃতির সব আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন, মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াস উদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দ্বারা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি থাকলে বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। একটা ব্যবসা বিএনপি নেতার নামে দিয়ে তার সন্তানের নামে হাজারটা ব্যবসা করায়। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার আহ্বান থাকবে এই সমস্ত দালালদের বিতাড়িত করে আপনারা নতুন কমিটি গঠন করেন।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকাকে আরো উন্নত করার দিকে আমরা অগ্রসর হবো, এখানে আদমজ জুট মিল ছিল কিন্তু সেটাকে বন্ধ করার পর ইপিজেড করা হয়েছে। এভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এই এলাকাকে যতটা সম্ভব উন্নয়তের দিকে নিয়ে যাব। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন সময় এখানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হয়েছে। সিটি কপোরেশনের এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জে দশটি ওয়ার্ড ছিল, এই দশটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলর ছিল গডফাদারের লোক। তারা নিজেরাও সন্ত্রাসী ও লুটেরা। এই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নাই যা তারা করেনি। বিএনপি যে ইপিজেড উপহার দিয়েছিল, সেখানের ভরপুর ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে তারা ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, এই টাকা লুটপাট করে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছিল। একইভাবে আন্দোলনের সময় বিএনপি এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদের ওপর তারা এই অস্ত্র দিয়েই হামলা করেছে। হামলা এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছে। তাদের কারণে এই এলাকার মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। আজ যখন ছাত্র জনতার আন্দোলনে বিজয় হয়েছে তখন এ এলাকার মানুষ আনন্দিত। এই সভায় আপনারা যেভাবে আনন্দ উল্লাস করে, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে এসেছেন আমি আগে এটা কখনো দেখিনি। আপনাদের এই উল্লাস দেখলে বোঝা যায় যে সন্ত্রাসীদের পতনের পর জনসাধারণের মধ্যে নতুন চেতনার সৃষ্টি হয়েছে। আর যখন আমরা আনন্দ করছি তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে, সমাজে দেখানোর মতা মুখ তাদের নেই। তবে পালালে হবে না যে অপরাধ তারা করেছে, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইপিজেডের মিল মালিকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত ১৬ বছর তাদেরকে আপনারা বিভিন্ন ভয়-ভীতির কারণে অনেক কিছু মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এখন যদি ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে তাদেরকে আরো অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করে তোলেন বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেন তাহলে এর দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। আমাদের দলের লোক হোক বা অন্য কেউ, ইপিজেডে যদি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে বা কোন মিল মালিক কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের জানাবেন তার বিচারের ব্যবস্থা আমরা করব। আপনারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবেন এটা আমরা চাই তবে কোন সন্ত্রাসীদের সাহায্য করলে আমরা ব্যথা পাব। আমরা যদি ব্যথা পাই তাহলে সেটার কি জ্বালা কি হতে পারে এটাও আপনারা জানেন।
সাবেক এই এমপি আরও বলেন, ওরা এমনই ব্যবস্থা করেছিল যে স্কুলে আমি অধ্যায়ন করেছি, সেই এম ডব্লিউ স্কুল থেকেই কিছু বিচার আসতো, যে কিছু প্রধান শিক্ষক এই স্কুল থেকে অনেক টাকা লুটপাট করেছে। আবার সেই শিক্ষকদের এই স্কুলে আনার জন্য অনেকে কন্টাক্ট নিয়ে কাজ করতো। জেলা প্রশাসনের কাছে আহবান করছি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তদন্ত করে এই দুর্নীতিবাজদের বের করতে হবে এবং শাস্তি মূলক ব্যবস্থা করতে হবে। যে অর্থ তারা লুটপাট করেছে সেই অর্থ প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে হবে। বিভিন্ন স্কুল কলেজে দেখা যায় বহিরাগত কিছু লোক এসে স্কুল প্রাঙ্গণের মধ্যে নিজের বক্তব্য দেয়। বহিরাগত কাউকে স্কুলের মধ্যে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল আমরা এগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু লোক আমার কাছে গোপনে আসে তারা বলে আওয়ামী লীগের সবাই তো খারাপ না। আমার প্রশ্ন যদি তারা ভালো হয় তাহলে বিগত ১৬ বছর যখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের উপর অত্যাচার চালিয়েছে তখন তারা চুপ ছিল কেন? অনেকেই বলবেন যে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে চুপ ছিলেন। আজ তো আপনাদের সেই ভয় নেই, আজ আপনাদের উচিত সেই সত্য কথা বলে প্রতিবাদ করে তাদেরকে বহিষ্কার করা। যদি সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করে আপনারা ভালো মানুষেরা নতুন ভাবে আওয়ামী লীগ করতে চান তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তা না হয়ে গডফাদার হাসিনাকে নিয়ে আপনারা আবার রাজনীতি করবেন বলে চিন্তা করছেন তাহলে ওই চিন্তা ছেড়ে দেন। এগুলো হচ্ছে স্বপ্নের ধুলোবালি। যারা চলে গেছে তারা এমনি যায়নি, এদেশের জনগণ যখন ক্ষেপে গিয়েছে সেটাকে ভয় পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে। আমরা আপনাদের বিতাড়িত করিনি আপনারা নিজেরাই পালিয়ে গেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মো: মাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, কেন্দ্রীয় জাসাস এর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল ইসলাম সানি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা এডভোকেট হাবিবুর রহমান মাসুম, যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম প্রমূখ।