০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-ধীরগতি

  • ১১:৫৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩৩৬

স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদী তীরে ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে ধীরগতিতে চলছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ। ২০২২ সালে জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও বাকি রয়েছে ৩০ শতাংশ কাজ। এরই মধ্যে দুইদফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

এছাড়া ওয়াকওয়ে নির্মাণেও রয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় খবরে পেয়ে সোমবার ২৫নং ওয়ার্ড বন্দরের চৌরাপাড়া এলাকায় ছাত্র-জনতার বাঁধা দেন। পরে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্প পরিচালক নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং ভালো মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

এলাকাবাসী জানান. নবীগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ কিছু এলাকায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দখলে থাকায় ওই স্থানে এসে থেমে গেছে নির্মাণ কাজ। কোথাও আবার সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে ডিঙিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন স্থাপনা। এতে লঙ্গিত হচ্ছে নদী রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশনা। এ ছাড়া ঘাট ইজারা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর ধরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় ৬ হাজার একশ’ ১৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয় তিনশ’ একর তীর ভুমি। এরপর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে উদ্ধারকৃত জায়গায় ১৭ কিলো মিটার দৈর্ঘ্যের ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে বর্তমানে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার একশ’ ৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বন্দরের লক্ষণখোলাসহ কয়েকটি এলাকায় ভুমি দখল মুক্ত না করেই পাশ কাটিয়ে চলছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ। দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার এসিআই আটা মিল, নবীগঞ্জের আকিজ সিমেন্ট কারখানাসহ কিছু এলাকায় অজ্ঞাত কারণে থমকে আছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ।

এছাড়া চরসৈয়দপুর এলাকার মছুয়াঘাটের কাছে ওয়াকওয়ে ডিঙিয়ে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির জানান, করোনায় লকডাউনের সময় কাজ বন্ধ থাকায় যথা সময়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ১৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের ১৪ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

মাছুয়াঘাট এলাকার সফিকুল ইসলাম লিটন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পূবালী সল্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওয়াকওয়ের পাশে নদীর জায়গায় ক্রেন স্থাপনের কাজ করছে। এখান দিয়ে মালামাল উঠা নামায় প্রতিষ্ঠানটি বছরে অর্ধ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তার। ঘাট প্রসঙ্গে ইজারাদার শেখ হায়দার আলী জানান, প্রায় ৪ কোটি টাকায় দু’টি ঘাটের ইজারা নিয়েছেন তারা।

কিন্তু ঘাটের সীমানায় অবস্থিত পূবালী সল্ট ফ্যাক্টরীকে মাত্র ৩ লাখ টাকায় জেটি লাইসেন্স দেয় বিআইডব্লিউটিএ। ফলে প্রতিষ্ঠানের লবন উঠানামার পাশাপাশি অনৈতিকভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের মালামালও লোড আনলোড করা হচ্ছে। এতে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

২০২৩ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পূবালী সল্ট ও পূবালী আয়োডাইজড সল্ট কারখানাকে এক হাজার একশ’ মেট্রিক টন লবন আমদানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু এমভি টাইগার ইষ্ট বেঙ্গল, এমভি ফাহিন আদিব, এমভি নওসিন হোসেন ও এমভি আকাশ এই চারটি জাহাজের মাধ্যমে ৭ হাজার দুইশ’ মেট্রিক টন লবন উত্তোলন করে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

পূবালী সল্টের মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা জানান, সড়ক পথে ট্রাকে করে প্রতিষ্ঠানের বেশীর ভাগ মালামাল পরিবহন করা হয়। নদী পথে তেমন মালামাল পরিবহন করা হয় না। মালামাল উঠানামা করার জন্য নদী তীরে একটি ক্রেন আগেই ছিল। আরেকটি ক্রেন বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে। নদীর জায়গায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। ঘাট ইজারাদারদের অত্যাচারে তার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নদী জায়গা দখলকারীদের অচিরেই নোটিশ প্রদান করা হবে। তারপর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ইজারাকৃত ঘাট দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অতিরিক্ত মালামাল উঠানামা করতে না পারে সে জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র নজরদারী রয়েছে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-ধীরগতি

১১:৫৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদী তীরে ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে ধীরগতিতে চলছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ। ২০২২ সালে জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও বাকি রয়েছে ৩০ শতাংশ কাজ। এরই মধ্যে দুইদফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

এছাড়া ওয়াকওয়ে নির্মাণেও রয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় খবরে পেয়ে সোমবার ২৫নং ওয়ার্ড বন্দরের চৌরাপাড়া এলাকায় ছাত্র-জনতার বাঁধা দেন। পরে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্প পরিচালক নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং ভালো মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

এলাকাবাসী জানান. নবীগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ কিছু এলাকায় নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দখলে থাকায় ওই স্থানে এসে থেমে গেছে নির্মাণ কাজ। কোথাও আবার সীমানা পিলার ও ওয়াকওয়ে ডিঙিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন স্থাপনা। এতে লঙ্গিত হচ্ছে নদী রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশনা। এ ছাড়া ঘাট ইজারা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর ধরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় ৬ হাজার একশ’ ১৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয় তিনশ’ একর তীর ভুমি। এরপর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে উদ্ধারকৃত জায়গায় ১৭ কিলো মিটার দৈর্ঘ্যের ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে বর্তমানে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার একশ’ ৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বন্দরের লক্ষণখোলাসহ কয়েকটি এলাকায় ভুমি দখল মুক্ত না করেই পাশ কাটিয়ে চলছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ। দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার এসিআই আটা মিল, নবীগঞ্জের আকিজ সিমেন্ট কারখানাসহ কিছু এলাকায় অজ্ঞাত কারণে থমকে আছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ।

এছাড়া চরসৈয়দপুর এলাকার মছুয়াঘাটের কাছে ওয়াকওয়ে ডিঙিয়ে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির জানান, করোনায় লকডাউনের সময় কাজ বন্ধ থাকায় যথা সময়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ১৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের ১৪ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

মাছুয়াঘাট এলাকার সফিকুল ইসলাম লিটন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পূবালী সল্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওয়াকওয়ের পাশে নদীর জায়গায় ক্রেন স্থাপনের কাজ করছে। এখান দিয়ে মালামাল উঠা নামায় প্রতিষ্ঠানটি বছরে অর্ধ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তার। ঘাট প্রসঙ্গে ইজারাদার শেখ হায়দার আলী জানান, প্রায় ৪ কোটি টাকায় দু’টি ঘাটের ইজারা নিয়েছেন তারা।

কিন্তু ঘাটের সীমানায় অবস্থিত পূবালী সল্ট ফ্যাক্টরীকে মাত্র ৩ লাখ টাকায় জেটি লাইসেন্স দেয় বিআইডব্লিউটিএ। ফলে প্রতিষ্ঠানের লবন উঠানামার পাশাপাশি অনৈতিকভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের মালামালও লোড আনলোড করা হচ্ছে। এতে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

২০২৩ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পূবালী সল্ট ও পূবালী আয়োডাইজড সল্ট কারখানাকে এক হাজার একশ’ মেট্রিক টন লবন আমদানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু এমভি টাইগার ইষ্ট বেঙ্গল, এমভি ফাহিন আদিব, এমভি নওসিন হোসেন ও এমভি আকাশ এই চারটি জাহাজের মাধ্যমে ৭ হাজার দুইশ’ মেট্রিক টন লবন উত্তোলন করে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

পূবালী সল্টের মালিক পরিতোষ কান্তি সাহা জানান, সড়ক পথে ট্রাকে করে প্রতিষ্ঠানের বেশীর ভাগ মালামাল পরিবহন করা হয়। নদী পথে তেমন মালামাল পরিবহন করা হয় না। মালামাল উঠানামা করার জন্য নদী তীরে একটি ক্রেন আগেই ছিল। আরেকটি ক্রেন বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে। নদীর জায়গায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। ঘাট ইজারাদারদের অত্যাচারে তার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নদী জায়গা দখলকারীদের অচিরেই নোটিশ প্রদান করা হবে। তারপর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ইজারাকৃত ঘাট দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অতিরিক্ত মালামাল উঠানামা করতে না পারে সে জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র নজরদারী রয়েছে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন