০২:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেপরোয়া মোটর সাইকেল-ভাঙ্গছে পরিবারের স্বপ্ন

  • ১০:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২
  • / ৪৫৪

ষ্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ঝড়ে যাচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। এতে ভাঙ্গছে পরিবারের স্বপ্ন। প্রতিটি মা-বাবার ইচ্ছা থাকে ছেলে বড় হয়ে ভালো কিছু হবে। কিন্তু না! ছেলে বড় হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় মোটরসাইকেল কিনার নতুন বায়না। বাবা-মা সন্তানের খুশির জন্য অনায়াসেই কিনে দিচ্ছেন প্রাণঘাতি এই মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল কিনার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় আঁকা-বাঁকা করে রেইস খেলা। কার আগে কে যাবে এমন প্রতিযোগিতায় প্রতিদিনই দেশের প্রতিটি এলাকায় ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। ঝড়ছে তাজা প্রাণ। ভেঙ্গে যাচ্ছে সন্তানকে ঘিরে মা-বাবার স্বপ্ন। সারাদেশে দিন দিন মোটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত এক দশকে মোটর সাইকেল আরোহীর সংখ্যা বেড়েছে ৭০গুণ। পুরো রূপগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার মোটর সাইকেল দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এদের কোনোটি লাইসেন্স আছে, কোনটি আবেদিত। তবে অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। মোটরসাইকেলের ভোঁ ভোঁ শব্দ আর উচ্চমাত্রার হর্ণ বাজানোর কারণে শব্দ দূষণের মাত্রাও বেড়ে গেছে।

অবৈধ মোটরসাইকেল অভিযানে পুলিশের কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেই। যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে এবং গণপরিবহনের বিকল্প হিসাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পাড়ি জামানোর অন্যতম বাহন মোটর সাইকেল। এটি ছোট যান কিন্তু ঝুঁকি অনেক। উঠতি বয়সীদের কাছে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শখের বাহন।

আগে শুধুমাত্র সম্ভ্রান্ত পরিবার আর চাকুরিজীবীদের মধ্যে মোটর সাইকেলের ব্যবহার ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মোটর সাইকেলের ব্যবহার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। এই বাহনে যাত্রী আনা নেওয়া করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। তবে ছোট্ট গতির এ বাহনটি অপরাধীদের ‘বাহন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে মোটরসাইকেল বহর না হলে চলেই না।

শখের এই বাহন অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা চালানোর ফলে এটি এখন বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩অনুযায়ী ১৮বছরের কম বয়সী কেউ মোটরসাইকেল চালানোর অধিকারী না হলেও রাস্তায় হরহামেশাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দেখা যায়। ফলে ঘটছে একের পর এক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা। আর ঝরছে তাজা প্রাণ।

অনুসন্ধানে জানা যায়,গত এক দশক আগে হঠাৎ করে রূপগঞ্জে জমির দাম এক লাফে বেড়ে যাওয়ায় ও মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটায়উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার হিড়িক পড়ে যায়। জমি বেঁচার টাকায় মোটরসাইকেল কিনে দিতে পরিবারের কাছে বায়না ধরে উঠতি বয়সের এসব তরুণ। উপায় না থাকলেও পরিবার কিনে দিতে বাধ্য হয়। এক দশক আগেও রূপগঞ্জে ৫‘শ মোটর সাইকেল পাওয়া ছিলো দুরুহ ব্যাপার।

এখন রূপগঞ্জে ঘরে ঘরে মোটরসাইকেল। গত ১০ বছরে মোটর সাইকেল বেড়েছে ৭০গুণ। রূপগঞ্জে প্রায় ৫০০০হাজার মোটরসাইকেল দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এই মোটর সাইকেল দিয়ে ছিনতাই,ডাকাতি, মাদকসহ ছোট-বড় সব ধরণের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এছাড়া মাত্র ১২ থেকে ১৫বছর বয়সী তরুণরা চালাচ্ছে মোটর সাইকেল। নেই তাদের বৈধ লাইসেন্স,নেই হেলমেট।

সড়কে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে মোটর সাইকেল। দূরপাল্লার বাস ও মালবাহী ট্রাকের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের জীবনকে যেমন বিপন্ন করে তুলছেন তেমন অন্যের জীবনকেও। ফলে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণসহ মৃত্যু কোলেও ঢলে পড়ছে। দিনকে দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কুশাব এলাকার গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় সাজ্জাত চৌধুরী (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়।

তারা এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে তিন বন্ধু মোটর সাইকেল চালিয়ে বানিজ্য মেলার উদ্দ্যেশে যাওয়ার পথে মোটর সাইকেল হঠাৎ সামনের চাকা স্লিপ করিলে পেছনে থাকা ব্যক্তি পড়ে যায়, এবং তাদের পিছনে থাকা একটি পিক-আপ ভ্যান ওভারটেকিং করার সময় পেছনে থাকা ওই যুবক সরাসরি চাকার নিচে পৃষ্ঠে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বলে হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে জানা যায়।

এই মর্মান্তিক ঘটনার এক মাস পর গত ১২ ফ্রেরুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের গোলাকান্দাইল নিলভিটা এলাকায় নছিমন ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক আল আমিন (৩২) নামে এক যুবক নিহত ও মোটরসাইকেলে থাকা আরও দুই জন আরোহী আহত হয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়া গত ৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন আড়াইহাজার উপজেলার বগাদী এলাকায় ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ইকবাল হোসেন (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর দুই দিন পর ৫ মে আড়াইহাজারের ব্রাহ্মদী এলাকার ঢাকা-আড়াইহাজার সড়কে একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী লাদেন(১৮) ও রিয়াদ (২০)দুই বন্ধু নিহত হয়। সর্বশেষ রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার বরাব এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীগামী মালবাহী ট্রাকের (ঢাকা-মেট্টো-ট-১১-৬৯২৪) ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আরিফ(৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্টো-হ-৬৮-৮৮১৭) আরোহী।

বৃহস্পতিবার(১৯মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার বরাব এলাকায় ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা। নিহত আরিফ(৩৫)শেরপুর জেলার সদর উপজেলার তাতালপুর এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার এস আই আকরাম জানান, ট্রাক ও মোটরসাইকেলটি ঢাকা থেকে গাউছিয়া যাচ্ছিল এমন সময় মোটরসাইকেলটি তারাবো পৌরসভার সামনে পৌঁছাতেই পিছনের ট্রাকটি ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তায় পড়ে গেলে ট্রাকের চাকার সাথে পৃষ্ঠে যায়। এভাবে দিনের পার দিন লাশের মিছিল বেড়েই চলছে।

বেপরোয়া গতির এসব মোটরসাইকেলরোধে পুলিশের কোনো পদক্ষেপের দেখা মিলে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেল চালক ছিলেন বেপরোয়া। একটি মোটরসাইকেলে চালকের বাইরে সর্বোচ্চ একজন আরোহী তোলার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

চালক ও আরোহীদের বেশির ভাগেরই হেলমেট ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে বৈধ লাইসেন্সও ছিল না চালকের। এই অতিজরুরি অপেক্ষাকৃত সস্তামূল্যের বাহনটি এখন রাজপথের আতঙ্ক হয়ে উঠছে। পথচারীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, দ্রুতগতির এই মোটর সাইকেল সড়ক-মহাসড়কের বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে।

সড়কে আকাঁ-বাকাঁ হয়ে চলছে মোটরসাইকেলগুলো এ যেন দেখার কেউ নেই।এদিকে, কিশোর ও তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় দেড়শ থেকে ১৬৫ সিসির স্পোর্টস মোটর বাইক। যাকে সুপার বাইকও বলেন তারা। আর এসব মোটর সাইকেল নিয়ে বেপরোয়া গতিতে সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ান। ফলে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক ডিজাইনের মোটর সাইকেল চালানো তরুণদের নেশায় পরিনত হয়েছে। তাই এই বাহনের রাশ টেনে ধরার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেন জানান, দিন দিন মোটরসাইকেল বেড়েই চলেছে। তবে কারো মাথায় যদি হেলমেট না থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা দিচ্ছি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর বলেন, আমাদের হাইওয়ে পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে । প্রতিদিনই এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি।তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এসব দূর্ঘটনাটি বেশিরভাগ মোটরসাইকেলগুলো অভারটেকিং এর কারণে হচ্ছে। সব বাবা-মার ছেলে-মেয়েদের মোটরসাইকেলের বিষয় সর্তক হওয়া জরুরী।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

বেপরোয়া মোটর সাইকেল-ভাঙ্গছে পরিবারের স্বপ্ন

১০:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২

ষ্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ঝড়ে যাচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। এতে ভাঙ্গছে পরিবারের স্বপ্ন। প্রতিটি মা-বাবার ইচ্ছা থাকে ছেলে বড় হয়ে ভালো কিছু হবে। কিন্তু না! ছেলে বড় হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় মোটরসাইকেল কিনার নতুন বায়না। বাবা-মা সন্তানের খুশির জন্য অনায়াসেই কিনে দিচ্ছেন প্রাণঘাতি এই মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল কিনার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় আঁকা-বাঁকা করে রেইস খেলা। কার আগে কে যাবে এমন প্রতিযোগিতায় প্রতিদিনই দেশের প্রতিটি এলাকায় ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। ঝড়ছে তাজা প্রাণ। ভেঙ্গে যাচ্ছে সন্তানকে ঘিরে মা-বাবার স্বপ্ন। সারাদেশে দিন দিন মোটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত এক দশকে মোটর সাইকেল আরোহীর সংখ্যা বেড়েছে ৭০গুণ। পুরো রূপগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার মোটর সাইকেল দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এদের কোনোটি লাইসেন্স আছে, কোনটি আবেদিত। তবে অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। মোটরসাইকেলের ভোঁ ভোঁ শব্দ আর উচ্চমাত্রার হর্ণ বাজানোর কারণে শব্দ দূষণের মাত্রাও বেড়ে গেছে।

অবৈধ মোটরসাইকেল অভিযানে পুলিশের কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেই। যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে এবং গণপরিবহনের বিকল্প হিসাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পাড়ি জামানোর অন্যতম বাহন মোটর সাইকেল। এটি ছোট যান কিন্তু ঝুঁকি অনেক। উঠতি বয়সীদের কাছে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শখের বাহন।

আগে শুধুমাত্র সম্ভ্রান্ত পরিবার আর চাকুরিজীবীদের মধ্যে মোটর সাইকেলের ব্যবহার ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মোটর সাইকেলের ব্যবহার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। এই বাহনে যাত্রী আনা নেওয়া করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। তবে ছোট্ট গতির এ বাহনটি অপরাধীদের ‘বাহন’ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে মোটরসাইকেল বহর না হলে চলেই না।

শখের এই বাহন অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা চালানোর ফলে এটি এখন বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩অনুযায়ী ১৮বছরের কম বয়সী কেউ মোটরসাইকেল চালানোর অধিকারী না হলেও রাস্তায় হরহামেশাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দেখা যায়। ফলে ঘটছে একের পর এক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা। আর ঝরছে তাজা প্রাণ।

অনুসন্ধানে জানা যায়,গত এক দশক আগে হঠাৎ করে রূপগঞ্জে জমির দাম এক লাফে বেড়ে যাওয়ায় ও মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটায়উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার হিড়িক পড়ে যায়। জমি বেঁচার টাকায় মোটরসাইকেল কিনে দিতে পরিবারের কাছে বায়না ধরে উঠতি বয়সের এসব তরুণ। উপায় না থাকলেও পরিবার কিনে দিতে বাধ্য হয়। এক দশক আগেও রূপগঞ্জে ৫‘শ মোটর সাইকেল পাওয়া ছিলো দুরুহ ব্যাপার।

এখন রূপগঞ্জে ঘরে ঘরে মোটরসাইকেল। গত ১০ বছরে মোটর সাইকেল বেড়েছে ৭০গুণ। রূপগঞ্জে প্রায় ৫০০০হাজার মোটরসাইকেল দাবড়ে বেড়াচ্ছে। এই মোটর সাইকেল দিয়ে ছিনতাই,ডাকাতি, মাদকসহ ছোট-বড় সব ধরণের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এছাড়া মাত্র ১২ থেকে ১৫বছর বয়সী তরুণরা চালাচ্ছে মোটর সাইকেল। নেই তাদের বৈধ লাইসেন্স,নেই হেলমেট।

সড়কে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে মোটর সাইকেল। দূরপাল্লার বাস ও মালবাহী ট্রাকের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের জীবনকে যেমন বিপন্ন করে তুলছেন তেমন অন্যের জীবনকেও। ফলে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণসহ মৃত্যু কোলেও ঢলে পড়ছে। দিনকে দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কুশাব এলাকার গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় সাজ্জাত চৌধুরী (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়।

তারা এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে তিন বন্ধু মোটর সাইকেল চালিয়ে বানিজ্য মেলার উদ্দ্যেশে যাওয়ার পথে মোটর সাইকেল হঠাৎ সামনের চাকা স্লিপ করিলে পেছনে থাকা ব্যক্তি পড়ে যায়, এবং তাদের পিছনে থাকা একটি পিক-আপ ভ্যান ওভারটেকিং করার সময় পেছনে থাকা ওই যুবক সরাসরি চাকার নিচে পৃষ্ঠে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বলে হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে জানা যায়।

এই মর্মান্তিক ঘটনার এক মাস পর গত ১২ ফ্রেরুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের গোলাকান্দাইল নিলভিটা এলাকায় নছিমন ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক আল আমিন (৩২) নামে এক যুবক নিহত ও মোটরসাইকেলে থাকা আরও দুই জন আরোহী আহত হয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়া গত ৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন আড়াইহাজার উপজেলার বগাদী এলাকায় ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ইকবাল হোসেন (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর দুই দিন পর ৫ মে আড়াইহাজারের ব্রাহ্মদী এলাকার ঢাকা-আড়াইহাজার সড়কে একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী লাদেন(১৮) ও রিয়াদ (২০)দুই বন্ধু নিহত হয়। সর্বশেষ রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার বরাব এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীগামী মালবাহী ট্রাকের (ঢাকা-মেট্টো-ট-১১-৬৯২৪) ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আরিফ(৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্টো-হ-৬৮-৮৮১৭) আরোহী।

বৃহস্পতিবার(১৯মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার বরাব এলাকায় ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা। নিহত আরিফ(৩৫)শেরপুর জেলার সদর উপজেলার তাতালপুর এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার এস আই আকরাম জানান, ট্রাক ও মোটরসাইকেলটি ঢাকা থেকে গাউছিয়া যাচ্ছিল এমন সময় মোটরসাইকেলটি তারাবো পৌরসভার সামনে পৌঁছাতেই পিছনের ট্রাকটি ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তায় পড়ে গেলে ট্রাকের চাকার সাথে পৃষ্ঠে যায়। এভাবে দিনের পার দিন লাশের মিছিল বেড়েই চলছে।

বেপরোয়া গতির এসব মোটরসাইকেলরোধে পুলিশের কোনো পদক্ষেপের দেখা মিলে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেল চালক ছিলেন বেপরোয়া। একটি মোটরসাইকেলে চালকের বাইরে সর্বোচ্চ একজন আরোহী তোলার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

চালক ও আরোহীদের বেশির ভাগেরই হেলমেট ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে বৈধ লাইসেন্সও ছিল না চালকের। এই অতিজরুরি অপেক্ষাকৃত সস্তামূল্যের বাহনটি এখন রাজপথের আতঙ্ক হয়ে উঠছে। পথচারীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, দ্রুতগতির এই মোটর সাইকেল সড়ক-মহাসড়কের বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে।

সড়কে আকাঁ-বাকাঁ হয়ে চলছে মোটরসাইকেলগুলো এ যেন দেখার কেউ নেই।এদিকে, কিশোর ও তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় দেড়শ থেকে ১৬৫ সিসির স্পোর্টস মোটর বাইক। যাকে সুপার বাইকও বলেন তারা। আর এসব মোটর সাইকেল নিয়ে বেপরোয়া গতিতে সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ান। ফলে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক ডিজাইনের মোটর সাইকেল চালানো তরুণদের নেশায় পরিনত হয়েছে। তাই এই বাহনের রাশ টেনে ধরার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেন জানান, দিন দিন মোটরসাইকেল বেড়েই চলেছে। তবে কারো মাথায় যদি হেলমেট না থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা দিচ্ছি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর বলেন, আমাদের হাইওয়ে পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে । প্রতিদিনই এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি।তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। আর এসব দূর্ঘটনাটি বেশিরভাগ মোটরসাইকেলগুলো অভারটেকিং এর কারণে হচ্ছে। সব বাবা-মার ছেলে-মেয়েদের মোটরসাইকেলের বিষয় সর্তক হওয়া জরুরী।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন