০৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কারাগার থেকে পলাতক তিন ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

  • ০৬:০০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৪২১

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক তিন ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত আসামিকে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১১‘র মিডিয়া অফিসার এএসপি সনদ বড়ুয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত মোসাদ্দেক সাদেক আলী(৩২) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নয়াগাঁও এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে, মো: জাকারিয়া(৩২) একই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে এবং মো: জুলহাস দেওয়ান(৪৫) মুন্সিগঞ্জ সদরের চরমুক্তারপুরের হাজী কামাল দেওয়ানের ছেলে।

র‌্যাব জানায়, গত ৬ আগস্ট বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দিরা বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহের সময় বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়।

এক পর্যায়ে বন্দিরা চলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামার মধ্যে দক্ষিণ অংশের পেরিমিটার ওয়াল ভেঙ্গে গর্ত করতে থাকলে তা প্রতিহত করা হয়। এ প্রতিহতকালীন সময়ে অন্য দিকে কারা অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক খুঁটি উপরে ফেলে মই বানিয়ে পশ্চিম দিকের দেওয়াল টপকে ২০৩ জন বন্দি পালিয়ে যায় এবং বুলেট ইনজুরিতে ৬ জন বন্দি মারা যান।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোসাদ্দেক এবং জাকারিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নয়াগাঁও এলাকায় জনৈক বারেক চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে হাঁস ও মুরগী চুরির ঘটনা ঘটে।

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারেক চৌধুরীর বাড়িতে একটি সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে শামীম ভুইয়া, মোসাদ্দেক আলী ও জাকারিয়া চুরির সাথে জড়িত বলে একই গ্রামের ফজলুল মোল্লার ছেলে মো: শামীম স্বাক্ষ্য দেন। চুরির ঘটনায় স্বাক্ষী দেওয়ার কারণে ভিকটিম মো: শামীমকে ক্রোধের বশবর্তি হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ মার্চ রাতে আসামী শামীম ভুইয়া ও তার সহযোগী মোসাদ্দেক এবং জাকারিয়া মিলে ভিকটিম মো: শামীমকে নয়াগাঁও গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে ডেকে নিয়ে যায়। আসামি শামীম ভুঁইয়া ও জাকারিয়া ভিকটিমের হাত-পা চেপে ধরে এবং আসামী মোসাদ্দেক ভিকটিমকে ছুরি দিয়ে জবাই করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা উক্ত ঘটনায় বাদী হয়ে ২০০৮ সালের ৩০ মার্চ আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (যার মামলা নং- আড়াইহাজার থানার মামলা নং-২৪(৩)০৮, ধারা- ৩০২ দন্ডবিধি)।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ১২ জুন ২০১৩ তারিখ তাদেরকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী মোসাদ্দেক আলীকে ২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল এবং জাকারিয়াকে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এবং পরবর্তীতে দুইজনকেই ২০১৩ সালের ১৮ জুন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত অপর আসামী মো: জুলহাস দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি। ঘটনার দিন ভিকটিম সাহাদ অনেক অসুস্থ ছিল।

২০১৪ সালের ১৩ই অক্টোবর তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাবা জুলহাস মুন্সিগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরের নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শিশু পুত্রের বাবা ও সাহাদ নিরুদ্দেশ ছিলেন। নিখোঁজ থাকার তিনদিন পর শিশু পুত্রের বাবা মোঃ জুলহাস দেওয়ান এর সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে ছেলে হারিয়ে গেছে বলে নানা অজুহাতে আশ্রয় নেয় সাহাদের বাবা। এতে সন্দেহ হলে তাকে মুক্তারপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাবা স্বীকার করে যে সে সাহাদ কে হত্যা করেছে।

শিশু পুত্র সাহাদের বাবার স্বীকারোক্তি মতে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর সাহাদের লাশ নারায়ণগঞ্জ কয়লাঘাটা এলাকায় একটি মুরগি ফার্মের পাশে ডোবা থেকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্ত্রী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দাম্পত্য কলহের জের ধরে নিজের পাঁচ বছরের শিশু পুত্র সাহাদ (৫) কে হত্যার দায়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর মোঃ জুলহাস দেওয়ান (৩২) কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। তাকে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলা কারাগার এবং ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী মো. জুলহাস দেওয়ানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ৫ টি মামলা চলমান রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং পলাতক সকল আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

কারাগার থেকে পলাতক তিন ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

০৬:০০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক তিন ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত আসামিকে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১১‘র মিডিয়া অফিসার এএসপি সনদ বড়ুয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত মোসাদ্দেক সাদেক আলী(৩২) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নয়াগাঁও এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে, মো: জাকারিয়া(৩২) একই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে এবং মো: জুলহাস দেওয়ান(৪৫) মুন্সিগঞ্জ সদরের চরমুক্তারপুরের হাজী কামাল দেওয়ানের ছেলে।

র‌্যাব জানায়, গত ৬ আগস্ট বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দিরা বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহের সময় বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়।

এক পর্যায়ে বন্দিরা চলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামার মধ্যে দক্ষিণ অংশের পেরিমিটার ওয়াল ভেঙ্গে গর্ত করতে থাকলে তা প্রতিহত করা হয়। এ প্রতিহতকালীন সময়ে অন্য দিকে কারা অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক খুঁটি উপরে ফেলে মই বানিয়ে পশ্চিম দিকের দেওয়াল টপকে ২০৩ জন বন্দি পালিয়ে যায় এবং বুলেট ইনজুরিতে ৬ জন বন্দি মারা যান।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোসাদ্দেক এবং জাকারিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নয়াগাঁও এলাকায় জনৈক বারেক চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে হাঁস ও মুরগী চুরির ঘটনা ঘটে।

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারেক চৌধুরীর বাড়িতে একটি সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে শামীম ভুইয়া, মোসাদ্দেক আলী ও জাকারিয়া চুরির সাথে জড়িত বলে একই গ্রামের ফজলুল মোল্লার ছেলে মো: শামীম স্বাক্ষ্য দেন। চুরির ঘটনায় স্বাক্ষী দেওয়ার কারণে ভিকটিম মো: শামীমকে ক্রোধের বশবর্তি হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ মার্চ রাতে আসামী শামীম ভুইয়া ও তার সহযোগী মোসাদ্দেক এবং জাকারিয়া মিলে ভিকটিম মো: শামীমকে নয়াগাঁও গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে ডেকে নিয়ে যায়। আসামি শামীম ভুঁইয়া ও জাকারিয়া ভিকটিমের হাত-পা চেপে ধরে এবং আসামী মোসাদ্দেক ভিকটিমকে ছুরি দিয়ে জবাই করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা উক্ত ঘটনায় বাদী হয়ে ২০০৮ সালের ৩০ মার্চ আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (যার মামলা নং- আড়াইহাজার থানার মামলা নং-২৪(৩)০৮, ধারা- ৩০২ দন্ডবিধি)।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ১২ জুন ২০১৩ তারিখ তাদেরকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী মোসাদ্দেক আলীকে ২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল এবং জাকারিয়াকে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এবং পরবর্তীতে দুইজনকেই ২০১৩ সালের ১৮ জুন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত অপর আসামী মো: জুলহাস দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি। ঘটনার দিন ভিকটিম সাহাদ অনেক অসুস্থ ছিল।

২০১৪ সালের ১৩ই অক্টোবর তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাবা জুলহাস মুন্সিগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরের নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শিশু পুত্রের বাবা ও সাহাদ নিরুদ্দেশ ছিলেন। নিখোঁজ থাকার তিনদিন পর শিশু পুত্রের বাবা মোঃ জুলহাস দেওয়ান এর সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে ছেলে হারিয়ে গেছে বলে নানা অজুহাতে আশ্রয় নেয় সাহাদের বাবা। এতে সন্দেহ হলে তাকে মুক্তারপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাবা স্বীকার করে যে সে সাহাদ কে হত্যা করেছে।

শিশু পুত্র সাহাদের বাবার স্বীকারোক্তি মতে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর সাহাদের লাশ নারায়ণগঞ্জ কয়লাঘাটা এলাকায় একটি মুরগি ফার্মের পাশে ডোবা থেকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্ত্রী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দাম্পত্য কলহের জের ধরে নিজের পাঁচ বছরের শিশু পুত্র সাহাদ (৫) কে হত্যার দায়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর মোঃ জুলহাস দেওয়ান (৩২) কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। তাকে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলা কারাগার এবং ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী মো. জুলহাস দেওয়ানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ৫ টি মামলা চলমান রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং পলাতক সকল আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন