০৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে

রূপগঞ্জে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ গুলি, নিহত ১ : আহত ১৮

  • ১১:৫৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
  • / ৪৪১

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চিহ্নিত দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মো.: দ্বীন ইসলাম (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের আরো অন্তত ১৮ জন।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। নিহত দ্বীন ইসলাম নাওড়া এলাকার মিল্লাত হোসেনের ছেলে।

আহতরা হলেন, নাওড়া এলাকার জাহিদ মিয়া, মো: সোহেল, শাহিন, জাহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, রাজীব, হোসেন মিয়া, নাজমুল প্রধান, জেসমিন, ইভা, ওয়াসিম ও সাখাওয়াত। আহতদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জে জমির ব্যবসা ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জেরে প্রায় সময়ই দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের জেরে মোশাররফ হোসেন এলাকা ছাড়া হন। গত মঙ্গলবার মোশাররফ তাঁর এক স্বজনের জানাযা নামাজে অংশ নিতে এলাকায় আসেন। সে সময় প্রতিপক্ষের লোকজন মোশাররফের উপর হামলা করলে মোশাররফ এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এর জেরে গত তিন দিন ধরে নাওড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই উত্তেজনা থেকে প্রথমে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি এবং বিকেল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন হেলমেট মাথায় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এরই মধ্যে উভয় পক্ষের একাধিক লোক গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দ্বীন ইসলাম নিহত হন।

এ বিষয়ে জানতে মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে মোশাররফের ফুফাতো ভাই ও নিহত দ্বীন ইসলামের চাচা নাজমুল প্রধানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পর এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। তিন দিন ধরেই মোশাররফ হোসেন ও স্থানীয় প্রধান বাড়িতে হামলার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে এলাকায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ করেই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তিন থেকে চারশো লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোশাররফ হোসেন ও নাজমুল প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায়। মোশাররফের লোকজন হামলায় বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় মিজানুর রহমান ও তাঁর সমর্থকরা শর্টগান ও পিস্তলের গুলি ছুড়ে। মিজানুরের ছোঁড়া গুলিতে দ্বীন ইসলাম আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

অভিযোগ করে নাজমুল বলেন, মিজান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। হামলার সময় পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়নি। তারা নির্বিকার ছিল। পুলিশের সামনে মিজান নিজে আমার ভাতিজাকে (দ্বীন ইসলাম) গুলি করছে।

তবে মিজানুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে মোশাররফের লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এতে মোশাররফের এক লোক নিহত হয়েছে। তিনি গ্রামে না থাকায় ঘটনার বিস্তারিত জানেন না।

নাজমুল প্রধানের অভিযোগ অস্বীকার করে রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ঘটনার সময় সেখানে নাওড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ছিলেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। পরে খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা থেকে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে অন্তত ১২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ি। পুলিশ নির্বিকার থাকার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।’

রাত নয়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি জানিয়ে ওসি বলেন, এলাকা এখন শান্ত আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে

রূপগঞ্জে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ গুলি, নিহত ১ : আহত ১৮

১১:৫৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চিহ্নিত দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মো.: দ্বীন ইসলাম (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের আরো অন্তত ১৮ জন।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। নিহত দ্বীন ইসলাম নাওড়া এলাকার মিল্লাত হোসেনের ছেলে।

আহতরা হলেন, নাওড়া এলাকার জাহিদ মিয়া, মো: সোহেল, শাহিন, জাহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, রাজীব, হোসেন মিয়া, নাজমুল প্রধান, জেসমিন, ইভা, ওয়াসিম ও সাখাওয়াত। আহতদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জে জমির ব্যবসা ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জেরে প্রায় সময়ই দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের জেরে মোশাররফ হোসেন এলাকা ছাড়া হন। গত মঙ্গলবার মোশাররফ তাঁর এক স্বজনের জানাযা নামাজে অংশ নিতে এলাকায় আসেন। সে সময় প্রতিপক্ষের লোকজন মোশাররফের উপর হামলা করলে মোশাররফ এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এর জেরে গত তিন দিন ধরে নাওড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই উত্তেজনা থেকে প্রথমে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি এবং বিকেল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন হেলমেট মাথায় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এরই মধ্যে উভয় পক্ষের একাধিক লোক গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দ্বীন ইসলাম নিহত হন।

এ বিষয়ে জানতে মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে মোশাররফের ফুফাতো ভাই ও নিহত দ্বীন ইসলামের চাচা নাজমুল প্রধানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পর এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। তিন দিন ধরেই মোশাররফ হোসেন ও স্থানীয় প্রধান বাড়িতে হামলার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে এলাকায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ করেই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তিন থেকে চারশো লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোশাররফ হোসেন ও নাজমুল প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায়। মোশাররফের লোকজন হামলায় বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় মিজানুর রহমান ও তাঁর সমর্থকরা শর্টগান ও পিস্তলের গুলি ছুড়ে। মিজানুরের ছোঁড়া গুলিতে দ্বীন ইসলাম আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

অভিযোগ করে নাজমুল বলেন, মিজান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। হামলার সময় পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়নি। তারা নির্বিকার ছিল। পুলিশের সামনে মিজান নিজে আমার ভাতিজাকে (দ্বীন ইসলাম) গুলি করছে।

তবে মিজানুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে মোশাররফের লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এতে মোশাররফের এক লোক নিহত হয়েছে। তিনি গ্রামে না থাকায় ঘটনার বিস্তারিত জানেন না।

নাজমুল প্রধানের অভিযোগ অস্বীকার করে রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ঘটনার সময় সেখানে নাওড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ছিলেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। পরে খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা থেকে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে অন্তত ১২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ি। পুলিশ নির্বিকার থাকার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।’

রাত নয়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি জানিয়ে ওসি বলেন, এলাকা এখন শান্ত আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন