১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সোনারগাঁয়ে বিপন্ন টক-মিষ্টি কাউফল

  • ০২:৩৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৪৬০

মাজহারুল রাসেল (আলোকিত শীতলক্ষ্যা) : দেশের কোন কোন এলাকায় কাউগোলা, তাহগোলা নামেও পরিচিত ফলটি। পুষ্টিগুণে ভরা বিপন্ন কাউফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই কাউফল মুখের অরুচি দূর করে। পরিমিত ক্যালরী সমৃদ্ধ চর্বি, ফাইবার ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি-বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে কথা হয় স্থানীয় মুরব্বিদের সাথে তারা জানান, কাউফল মানে শৈশবের একমুঠো আনন্দময় স্মৃতি। টসটসে কাউফলগুলো লোভনীয় রং মেখে ডাকবে আমাদের। তারপর একদিন হারিয়ে ফেলেছি ছেলেবেলায় মনের গহনে যতন করে রাখা সেই ফলগুলো। লোকালয়ের গ্রামীণ বন অনেক আগেই নিঃশেষ। ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে প্রাকৃতিক বনও। বন না থাকলে বুনোফল থাকবে কোথায়! অথচ এক সময় আমাদের বনবাদাড়ে কাউফল অঢেল ছিল।

নিশ্চিত করে বলা যায়, আমাদের বিপন্ন বুনোফলের তালিকায় কাউফল বেশ শক্তপোক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামই এখন কাউফলশূন্য। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, পার্বত্যাঞ্চল ও উপকূলীয় জেলাগুলোয় অল্পকিছু গাছ চোখে পড়ে। প্রাক-বর্ষায় ফলটি স্বল্প সময়ের জন্য বাজারে এলে মনে হয়, এখনও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তবে আর কতদিন দেখতে পাব তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ সুশ্রী গাছ। শাখা ঝুলন্ত, নিচের ডালগুলো ভূমিস্পর্শী। পাতা ৭ থেকে ১২ সেমি চ্যাপ্টা, লম্বাটে, চার্ম, নিচটা ঝলমলে সবুজ, ওপর সামান্য লালচে, আগা চোখা। নিশ্ছিদ্র পাতার বুননে বেশ আকর্ষণীয়। ঝুলন্ত ডালপালায় ফুল আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। একই গাছে দুই ধরনের ফুল (স্ত্রী ও পুং) ফোটে। ফুলগুলো লালচে হলুদ, দেড় সেমি চওড়া, ৩ থেকে ৮টি পুং ফুল গুচ্ছবদ্ধ, পুংকেশর অজস্র, পরাগ ৪ কোষী। স্ত্রী ফুল আকারে পুং ফুল অপেক্ষা বড়, মঞ্জরিতে সংখ্যায়ও কম। ফল পাকে জুন-জুলাই মাসে। ফল গোলাকার, ঈষৎ খাঁজযুক্ত। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলুদাভ। বীজযুক্ত শাঁস কমলা-হলুদ রঙের, রসাল ও মুখরোচক। শিশুদের প্রিয়। ফলে শতকরা প্রায় ২.৩ ভাগ ও খোসায় ১২.৭ ভাগ হাইড্রোক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড আছে। অনেকেই নুন-মরিচ মাখিয়ে খেতে পছন্দ করেন। ফল জ্যাম-জেলি করে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো ফল ও কচিপাতা নানা কাজে ব্যবহার্য।

আশা করি, সোনারগাঁ উপজেলার কৃষি বিভাগ উদ্যোগী হয়ে কাউফলকে নিশ্চিত বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

সোনারগাঁয়ে বিপন্ন টক-মিষ্টি কাউফল

০২:৩৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২২

মাজহারুল রাসেল (আলোকিত শীতলক্ষ্যা) : দেশের কোন কোন এলাকায় কাউগোলা, তাহগোলা নামেও পরিচিত ফলটি। পুষ্টিগুণে ভরা বিপন্ন কাউফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই কাউফল মুখের অরুচি দূর করে। পরিমিত ক্যালরী সমৃদ্ধ চর্বি, ফাইবার ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি-বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে কথা হয় স্থানীয় মুরব্বিদের সাথে তারা জানান, কাউফল মানে শৈশবের একমুঠো আনন্দময় স্মৃতি। টসটসে কাউফলগুলো লোভনীয় রং মেখে ডাকবে আমাদের। তারপর একদিন হারিয়ে ফেলেছি ছেলেবেলায় মনের গহনে যতন করে রাখা সেই ফলগুলো। লোকালয়ের গ্রামীণ বন অনেক আগেই নিঃশেষ। ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে প্রাকৃতিক বনও। বন না থাকলে বুনোফল থাকবে কোথায়! অথচ এক সময় আমাদের বনবাদাড়ে কাউফল অঢেল ছিল।

নিশ্চিত করে বলা যায়, আমাদের বিপন্ন বুনোফলের তালিকায় কাউফল বেশ শক্তপোক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামই এখন কাউফলশূন্য। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, পার্বত্যাঞ্চল ও উপকূলীয় জেলাগুলোয় অল্পকিছু গাছ চোখে পড়ে। প্রাক-বর্ষায় ফলটি স্বল্প সময়ের জন্য বাজারে এলে মনে হয়, এখনও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তবে আর কতদিন দেখতে পাব তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ সুশ্রী গাছ। শাখা ঝুলন্ত, নিচের ডালগুলো ভূমিস্পর্শী। পাতা ৭ থেকে ১২ সেমি চ্যাপ্টা, লম্বাটে, চার্ম, নিচটা ঝলমলে সবুজ, ওপর সামান্য লালচে, আগা চোখা। নিশ্ছিদ্র পাতার বুননে বেশ আকর্ষণীয়। ঝুলন্ত ডালপালায় ফুল আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। একই গাছে দুই ধরনের ফুল (স্ত্রী ও পুং) ফোটে। ফুলগুলো লালচে হলুদ, দেড় সেমি চওড়া, ৩ থেকে ৮টি পুং ফুল গুচ্ছবদ্ধ, পুংকেশর অজস্র, পরাগ ৪ কোষী। স্ত্রী ফুল আকারে পুং ফুল অপেক্ষা বড়, মঞ্জরিতে সংখ্যায়ও কম। ফল পাকে জুন-জুলাই মাসে। ফল গোলাকার, ঈষৎ খাঁজযুক্ত। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলুদাভ। বীজযুক্ত শাঁস কমলা-হলুদ রঙের, রসাল ও মুখরোচক। শিশুদের প্রিয়। ফলে শতকরা প্রায় ২.৩ ভাগ ও খোসায় ১২.৭ ভাগ হাইড্রোক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড আছে। অনেকেই নুন-মরিচ মাখিয়ে খেতে পছন্দ করেন। ফল জ্যাম-জেলি করে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো ফল ও কচিপাতা নানা কাজে ব্যবহার্য।

আশা করি, সোনারগাঁ উপজেলার কৃষি বিভাগ উদ্যোগী হয়ে কাউফলকে নিশ্চিত বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন