০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সোনারগাঁয়ে বিলুপ্তির পথে বেত ও বেত ফল

  • ১১:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১২৮৪

মাজহারুল রাসেল ( আলোকিত শীতলক্ষ্যা ) : সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে একটি ছিলো বেত গাছ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়। এর ফলকে বেত ফল বা বেতুন বলে। আঙ্গুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পেকে থাকে। দুষ্ট ছেলে-মেয়ের দল অনেক কষ্ট শিকার করে এসব বেত ফল সংগ্রহ করে লবণ-মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেত ফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কৃষকের মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি তৈরি ইত্যাদি কাজে বেত ব্যবহার হয়ে থাকে। আর শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। সাবাড় করে দিয়েছে বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র প্রকৃতির বন।

সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত। যাকে গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বেতমুড়া বলা হতো। অথচ আজ উপজেলার কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে। বেত গ্রামের আনাচে-কানাচে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রয়েছে বাণিজ্যিক কদর। গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির পাশাপাশি তা শহরে রপ্তানি হতো। গত কয়েক বছর পূর্বেও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হাটের দিন গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। এখন আর বেত বাজারে উঠেনা। যেসব এলাকায় এখনও বেতগাছ আছে সেখানকার কৃষকরা জমিতে বেড়া দেয়ার জন্য বেতগাছের ডালপালা ব্যবহার করেন।

সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভা, সনমান্দী, বারদী, শম্ভুপুরা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনও বেত ঝাড় রয়েছে। তবে বেত ব্যবহার বলতে জমিতে ফসলের সুরক্ষার জন্য জমির আইলে বেড়া দেয়ার জন্যই বেশী ব্যবহার হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় বাড়ৈ জাতের মানুষ আজও বেত দিয়ে মোড়া, ঝুড়িসহ সৌখিন আসবাবপত্র তৈরী করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেতের তৈরী পন্য বিক্রেতা রহিম জানান, বেত অনেকটাই দুস্পপ্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের তৈরি দড়ি বা রশি। তার মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। কারণ, আগে যেখানে প্রতি বাড়িতেই বেত ঝাড় দেখতে পাওয়া যেত, সেখানে আজ একটি গ্রাম ঘুরলেও পাঁচটি বেতঝাড় খুঁজে পাওয়া যায় না।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন

👍ফেসবুকে আলোকিত শীতলক্ষ্যা

সোনারগাঁয়ে বিলুপ্তির পথে বেত ও বেত ফল

১১:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

মাজহারুল রাসেল ( আলোকিত শীতলক্ষ্যা ) : সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে একটি ছিলো বেত গাছ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়। এর ফলকে বেত ফল বা বেতুন বলে। আঙ্গুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পেকে থাকে। দুষ্ট ছেলে-মেয়ের দল অনেক কষ্ট শিকার করে এসব বেত ফল সংগ্রহ করে লবণ-মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেত ফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কৃষকের মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি তৈরি ইত্যাদি কাজে বেত ব্যবহার হয়ে থাকে। আর শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। সাবাড় করে দিয়েছে বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র প্রকৃতির বন।

সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত। যাকে গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বেতমুড়া বলা হতো। অথচ আজ উপজেলার কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে। বেত গ্রামের আনাচে-কানাচে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রয়েছে বাণিজ্যিক কদর। গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির পাশাপাশি তা শহরে রপ্তানি হতো। গত কয়েক বছর পূর্বেও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হাটের দিন গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। এখন আর বেত বাজারে উঠেনা। যেসব এলাকায় এখনও বেতগাছ আছে সেখানকার কৃষকরা জমিতে বেড়া দেয়ার জন্য বেতগাছের ডালপালা ব্যবহার করেন।

সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভা, সনমান্দী, বারদী, শম্ভুপুরা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনও বেত ঝাড় রয়েছে। তবে বেত ব্যবহার বলতে জমিতে ফসলের সুরক্ষার জন্য জমির আইলে বেড়া দেয়ার জন্যই বেশী ব্যবহার হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় বাড়ৈ জাতের মানুষ আজও বেত দিয়ে মোড়া, ঝুড়িসহ সৌখিন আসবাবপত্র তৈরী করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেতের তৈরী পন্য বিক্রেতা রহিম জানান, বেত অনেকটাই দুস্পপ্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের তৈরি দড়ি বা রশি। তার মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। কারণ, আগে যেখানে প্রতি বাড়িতেই বেত ঝাড় দেখতে পাওয়া যেত, সেখানে আজ একটি গ্রাম ঘুরলেও পাঁচটি বেতঝাড় খুঁজে পাওয়া যায় না।

সংবাদটি ▼ শেয়ার করুন