নারায়ণগঞ্জ ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ে বাড়ির আঙিনায় নারীরা সবজি বাগান করে সফলতা

 অনলাইন ভার্সন
  • ১০:৪৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭১৪

"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

মাজহারুল রাসেল (আলোকিত শীতলক্ষ্যা) : উপজেলার গ্রামাঞ্চল এলাকায় বেশিরভাগ বাড়ি ঘরে ‘পাট কাঠির বেড়া, তার উপরে পলিথিন আর পাটকাঠি দিয়েই চালা দেওয়া রান্না ঘর। রান্না ঘরের পাশের একটু জায়গা থেকে বাঁশের কঞ্চি বেয়ে উঠছে কুমড়া গাছের লতাগুলো। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেয়ে উঠছে মেটে আলুর লতাও। কিছু কিছু ঘরের চাল ছেয়ে গেছে চাল কুমড়ার লতায়। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে লতানো এই গাছগুলো। ঘরের এক কোণে বাঁশের মাচায় ভর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে পুঁইশাক, করলা, সিম, বরবটি, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিংগা। নতুন লাগানো পেঁপে গাছেও এসেছে ফুল, ধরেছে পেঁপে। এ যেন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য।’

এগুলো সবই গ্রামাঞ্চল নারীদের গড়ে তোলা ফসলের চিত্র। উপজেলার শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির আঙিনা ছাড়া প্রত্যেকটি গ্রামাঞ্চলের আঙিনা,ঘরের চালা, রান্না ঘরের চালা তারা সবজিতে ভরে তুলছেন।

গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলো এখন এক একটি পুষ্টির বাগানে রূপ নিয়েছে। মৌসুমি নানা সবজির চাষ করছেন বাড়ি গুলিতে।

এবং রাস্তার দুই ধারের পতিত জমিতে মাচা করে শিম, করলা ও চালকুমড়ার চাষ করেছেন। স্বল্প পরিসরে বসতবাড়ির আঙিনায় এসব সবজি চাষ করে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমন পরিবেশও সুন্দর হচ্ছে। এবং নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন নারীরা।

পুরুষের চেয়ে নারীরাও এগিয়ে এ চাষের ক্ষেত্রে। আর বাড়ির আশেপাশের এসব জমি এবং ঘরের চালায় সবজি চাষ সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস।

সেই সঙ্গে বিনামূল্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে এসব সবজি বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি অফিস। সেই বীজ রোপন করে পরিচর্যা করেছেন নারীরা। বাড়ির আশেপাশে এসব সবজি চাষ করে বেশ খুশি তারা।

জামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরিদা খাতুন বলেন, বাড়ির পাশে এবং ঘরের চালায় যে সবজি করা যায় তা বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারে যেসব সবজি পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক ভালো। বাজারে বেশিরভাগই সার ও বিষ দেওয়া সবজি। তিনি বলেন, আমি ঘরের এক পাশে চালকুমড়ার বীজ রোপন করেছিলাম। চালকুমড়ার লতা এখন ঘরের চাল ছেয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি চালকুমড়াও পেয়েছি।

সনমান্দি ইউনিয়নের রোজিনা জানান, করোনার মধ্যে কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদের এখানে বিনামূল্যে বিভিন্ন সবজির বীজ দিয়ে গিয়েছিল। আমি লাউ, চালকুমড়া, পুঁইশাকের বীজ নিয়েছিলাম। বাড়ির আঙিনায় সেগুলো চাষ করেছি। এতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারছি।

বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের হোসনেয়ারা জানান, আমি চালকুমড়া ও করলার বীজ পেয়েছিলাম। সেগুলো রোপনের পরে লতাগুলোকে আমি বাঁশের মাচা করে তুলে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি ১০-১৫টা কুমড়া পেয়েছি। করলা এখনো ধরেনি। তবে ফুল এসেছে। আশা করি নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে কিছু বিক্রি করতে পারবো।

উপজেলায় শুধু তারা নয় তাদের মতো প্রায় সবাই বাড়ির আঙিনায় ও ঘরের চালা ব্যবহার করে সবজি চাষ করেছে। এতে পুরো করে উপজেলার গ্রামাঞ্চল যেন সবজি বাগানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, আমি নিয়মিত গ্রামাঞ্চলের এসব বাড়ির আঙিনার সবজি বাগান গুলি পরিদর্শন করি। বসত বাড়িতে এসব সবজিতে তেমন একটা খরচ ও পরিচর্যার দরকার হয়না।

করোনা ভাইরাস দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষকদের বসত বাড়িতে পতিত জায়গায় ফসল উৎপাদনের নিয়ে আসার লক্ষে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করেছি। বাড়িতে রোপণের জন্য মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, করলা, লালশাক, সবুজশাক, ঢেঁঢ়স, পুঁইশাক, গীমাকলমি, পেঁপে ও বাঙির বীজ বিনামূল্যে দিয়েছি। যাতে তারা বসতবাড়িতে এসব সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে উপজেলার সব পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য আমরা চেষ্টা করে চলেছি।

ফেসবুকে👍আপনার_বিজ্ঞাপন

সোনারগাঁয়ে বাড়ির আঙিনায় নারীরা সবজি বাগান করে সফলতা

১০:৪৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
"সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন"

মাজহারুল রাসেল (আলোকিত শীতলক্ষ্যা) : উপজেলার গ্রামাঞ্চল এলাকায় বেশিরভাগ বাড়ি ঘরে ‘পাট কাঠির বেড়া, তার উপরে পলিথিন আর পাটকাঠি দিয়েই চালা দেওয়া রান্না ঘর। রান্না ঘরের পাশের একটু জায়গা থেকে বাঁশের কঞ্চি বেয়ে উঠছে কুমড়া গাছের লতাগুলো। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেয়ে উঠছে মেটে আলুর লতাও। কিছু কিছু ঘরের চাল ছেয়ে গেছে চাল কুমড়ার লতায়। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে লতানো এই গাছগুলো। ঘরের এক কোণে বাঁশের মাচায় ভর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে পুঁইশাক, করলা, সিম, বরবটি, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিংগা। নতুন লাগানো পেঁপে গাছেও এসেছে ফুল, ধরেছে পেঁপে। এ যেন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য।’

এগুলো সবই গ্রামাঞ্চল নারীদের গড়ে তোলা ফসলের চিত্র। উপজেলার শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির আঙিনা ছাড়া প্রত্যেকটি গ্রামাঞ্চলের আঙিনা,ঘরের চালা, রান্না ঘরের চালা তারা সবজিতে ভরে তুলছেন।

গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলো এখন এক একটি পুষ্টির বাগানে রূপ নিয়েছে। মৌসুমি নানা সবজির চাষ করছেন বাড়ি গুলিতে।

এবং রাস্তার দুই ধারের পতিত জমিতে মাচা করে শিম, করলা ও চালকুমড়ার চাষ করেছেন। স্বল্প পরিসরে বসতবাড়ির আঙিনায় এসব সবজি চাষ করে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমন পরিবেশও সুন্দর হচ্ছে। এবং নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন নারীরা।

পুরুষের চেয়ে নারীরাও এগিয়ে এ চাষের ক্ষেত্রে। আর বাড়ির আশেপাশের এসব জমি এবং ঘরের চালায় সবজি চাষ সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অফিস।

সেই সঙ্গে বিনামূল্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে এসব সবজি বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি অফিস। সেই বীজ রোপন করে পরিচর্যা করেছেন নারীরা। বাড়ির আশেপাশে এসব সবজি চাষ করে বেশ খুশি তারা।

জামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরিদা খাতুন বলেন, বাড়ির পাশে এবং ঘরের চালায় যে সবজি করা যায় তা বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারে যেসব সবজি পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক ভালো। বাজারে বেশিরভাগই সার ও বিষ দেওয়া সবজি। তিনি বলেন, আমি ঘরের এক পাশে চালকুমড়ার বীজ রোপন করেছিলাম। চালকুমড়ার লতা এখন ঘরের চাল ছেয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি চালকুমড়াও পেয়েছি।

সনমান্দি ইউনিয়নের রোজিনা জানান, করোনার মধ্যে কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদের এখানে বিনামূল্যে বিভিন্ন সবজির বীজ দিয়ে গিয়েছিল। আমি লাউ, চালকুমড়া, পুঁইশাকের বীজ নিয়েছিলাম। বাড়ির আঙিনায় সেগুলো চাষ করেছি। এতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারছি।

বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের হোসনেয়ারা জানান, আমি চালকুমড়া ও করলার বীজ পেয়েছিলাম। সেগুলো রোপনের পরে লতাগুলোকে আমি বাঁশের মাচা করে তুলে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি ১০-১৫টা কুমড়া পেয়েছি। করলা এখনো ধরেনি। তবে ফুল এসেছে। আশা করি নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে কিছু বিক্রি করতে পারবো।

উপজেলায় শুধু তারা নয় তাদের মতো প্রায় সবাই বাড়ির আঙিনায় ও ঘরের চালা ব্যবহার করে সবজি চাষ করেছে। এতে পুরো করে উপজেলার গ্রামাঞ্চল যেন সবজি বাগানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, আমি নিয়মিত গ্রামাঞ্চলের এসব বাড়ির আঙিনার সবজি বাগান গুলি পরিদর্শন করি। বসত বাড়িতে এসব সবজিতে তেমন একটা খরচ ও পরিচর্যার দরকার হয়না।

করোনা ভাইরাস দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষকদের বসত বাড়িতে পতিত জায়গায় ফসল উৎপাদনের নিয়ে আসার লক্ষে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করেছি। বাড়িতে রোপণের জন্য মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, করলা, লালশাক, সবুজশাক, ঢেঁঢ়স, পুঁইশাক, গীমাকলমি, পেঁপে ও বাঙির বীজ বিনামূল্যে দিয়েছি। যাতে তারা বসতবাড়িতে এসব সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে উপজেলার সব পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য আমরা চেষ্টা করে চলেছি।